গুলিবিদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ওরফে ‘কেলে চিমা’ নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্তরা এখনও অধরা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, একই মহিলার সঙ্গে প্রণয়ের রেষারেষিতে দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বুধবার গুলি চলে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেই গুলি লাগে কলেজপড়ুয়া ইন্দ্রনীল রায়ের (২০) তলপেটে। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কৃষ্ণনগর শহরেরই গোহাট এলাকার এক গোপন ডেরায় হানা দিয়ে বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করে। দুষ্কৃতীদের যে গোষ্ঠী সেদিন গুলি চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল বিশ্বজিৎ, দাবি পুলিশের। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন যাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল, সে শহরের পরিচিত দুষ্কৃতী নিতাই দাসের ঘনিষ্ঠ। আবার ধৃত বিশ্বজিৎ-সহ অন্য যে দুষ্কৃতীরা সেদিন গুলি চালিয়েছিল, তারাও নিতাই-গোষ্ঠীর লোক।
গোড়ায় পুলিশ মনে করেছিল, শহরের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী, ব্যাঙা সিংহ এবং নিতাই দাসের মধ্যে রেষারেষির জেরেই এই ঘটনা। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এটা নিতাইয়ের দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব। পুলিশের দাবি, আক্রমণকারীদের একজনের স্ত্রীর সঙ্গে গুলির লক্ষ্য ব্যক্তির প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের দু’জনকে রাজবাড়ির মাঠে কীটনাশক খেয়ে পড়েও থাকতে দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে নিতাইয়ের গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা মিশে সম্প্রতি শহরের দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তারই জেরে ওই ঘটনা, বলে মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের অনেকেই। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ইন্দ্রনীলের মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দেখতে নারাজ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেলেডাঙা এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই শহরের দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। এক সময়ের কুখ্যাত দুষ্কৃতী পরিতোষ দত্ত ওরফে ‘হাতকাটা পরি’ ২০১২ সালে জুন মাস থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশের একাংশের দাবি, দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে তাকে জেলার বাইরে টোপ দিয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। পরি নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর থেকে এলাকা কার দখলে থাকবে, বেলেডাঙা, শক্তিনগর ও গরুরহাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কে কতটা তোলা আদায় করবে তা নিয়ে নিতাই ও ব্যাঙার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। মাঝে মধ্যেই একে অপরের উপরে হামলাও চালাতে থাকে।
এরই মধ্যে বছর কয়েক আগে রাতে ব্যাঙাকে না পেয়ে তার মাকে খুন করার অভিযোগ ওঠে নিতাই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারপর থেকে ব্যাঙা এলাকা ছাড়া। কিন্তু সে সম্প্রতি আবার সঙ্গী জুটিয়ে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করে। জেলা পুলিশের এক অংশ জানিয়েছে, এরই মধ্যে নানা কারণে নিতাই-এর গোষ্ঠীতেও অন্তর্কলহ দেখা যায়। তোলাবাজির ভাগ-বাটোয়ারার পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও দুরত্ব তৈরি হয়। আর সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে ব্যাঙা। দুষ্কৃতীদের নানা গোষ্ঠীদের মধ্যে হানাহানি লেগেই আছে। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, পুলিশ যদি আগে থেকেই সক্রিয় হত তাহলে ওই ধরণের ঘটনা ঘটত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy