Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মিলছে না রান্নার গ্যাস, ফুঁসছে ধুলিয়ান

ধুলিয়ান ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রশান্ত মিত্র রান্নার গ্যাস বুক করেছিলেন ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রায় এক মাস অপেক্ষার পরে গ্যাস না পেয়ে ফের তিনি ৩১ অক্টোবর গ্যাস বুক করেন। তারপরেও গ্যাস না পেয়ে তিনি স্থানীয় গ্যাসের কাউন্টারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন যে, ৮ অক্টোবর ও ২২ নভেম্বর তারিখে দুটো সিলিন্ডার ডেলিভারি দেখানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে তিনি একটিও সিলিন্ডার পাননি। প্রশান্তবাবু বলেন, “ডিলারের কারসাজি ছাড়া কী করে এই জালিয়াতি সম্ভব? আমি সামশেরগঞ্জ থানায় গিয়েছিলাম অভিযোগ জানাতে। কিন্তু সে অভিযোগ নেওয়া হয়নি।”

কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

ধুলিয়ান ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রশান্ত মিত্র রান্নার গ্যাস বুক করেছিলেন ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রায় এক মাস অপেক্ষার পরে গ্যাস না পেয়ে ফের তিনি ৩১ অক্টোবর গ্যাস বুক করেন। তারপরেও গ্যাস না পেয়ে তিনি স্থানীয় গ্যাসের কাউন্টারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন যে, ৮ অক্টোবর ও ২২ নভেম্বর তারিখে দুটো সিলিন্ডার ডেলিভারি দেখানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে তিনি একটিও সিলিন্ডার পাননি। প্রশান্তবাবু বলেন, “ডিলারের কারসাজি ছাড়া কী করে এই জালিয়াতি সম্ভব? আমি সামশেরগঞ্জ থানায় গিয়েছিলাম অভিযোগ জানাতে। কিন্তু সে অভিযোগ নেওয়া হয়নি।”

কাঁকুড়িয়ার সুলতা সাহা তিন বছর থেকে গ্যাসের গ্রাহক। অথচ এখনও পর্যন্ত তাঁকে কোনও নথিপত্রও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “৪৩২ নম্বর লিখে একটা স্লিপ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘যখন গ্যাস লাগবে চলে আসবেন, দিয়ে দেব।’ কিন্তু তিন মাস ঘুরছি, গ্যাস পাচ্ছি না।”

আঁকুড়ার বাসিন্দা শেষনাথ সরকার শেষ বার গ্যাস পেয়েছেন ১২ অগস্ট। তারপরে ২৫ অগস্ট, ২০ সেপ্টেম্বর, ১৫ অক্টোবর ও ৮ নভেম্বর চার দফায় তিনি চার বার গ্যাস বুক করেছেন। কিন্তু চারটির মধ্যে একটি সিলিন্ডারও তিনি পাননি। শেষনাথবাবুর প্রশ্ন, “গ্যাসের ওই কাউন্টারের খাতায় দেখানো হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২৭ অক্টোবর ও ৩০ নভেম্বর সিলিন্ডারগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ একটি সিলিন্ডারও আমি পেলাম না। তাহলে ওগুলো গেল কোথায়?”

একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর ইসলাম, গরুরহাটের বাবর আলি, নেফাউর রহমান, তারবাগানের ফতেমা বিবি, হরিসভার মীনা পাল-সহ অসংখ্য গ্রাহকের। তাঁদের অভিযোগ, “ডিলারের কাছে গ্যাস মিলছে না মাসের পর মাস। অথচ বাইরের বাজারে চোরাপথে হাজার টাকা দামে অবাধে বিকোচ্ছে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার।” ফলে দীর্ঘদিন ধরে রান্নার গ্যাস না পেয়ে ও চোখের সামনে এমন সব অনিয়ম দেখে ফুঁসছে গোটা ধুলিয়ান শহর। স্থানীয় ডিলারের কাউন্টারের সামনে সকাল থেকেই লম্বা লাইন ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে প্রতিদিনই। দিনকয়েক আগে গ্যাসের ওই কাউন্টারে ভাঙচুরও চালিয়েছেন উত্তেজিত মানুষজন। ফলে প্রতিদিনই এখন পরিস্থিতি সামলাতে কাউন্টারের সামনে রঘুনাথগঞ্জ থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার্স থাকছে।

গ্যাস নিয়ে যে চোরাকারবার চলছে তা স্বীকার করছে প্রশাসনের একাংশ। গত কয়েকদিনে তিনপাকুড়িয়া, বাসুদেবপুর ও গরুরহাট এলাকা থেকে খালি ও গ্যাস ভর্তি প্রায় ৩০০টি সিলিন্ডার-সহ ৩ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও শহরে গ্যাসের চোরাকারবার বন্ধ করা যায়নি। রান্নার গ্যাস নিয়ে এই হাহাকারে বহু বাড়িতেই এখন হিটার ও কেরোসিনের স্টোভ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ধুলিয়ান শহর-সহ লাগোয়া এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহককে একটি কোম্পানির রান্নার গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় এক এজেন্সি। ওই এজেন্সির মালিক তথা ডিলার অঞ্জনা দাস বর্তমানে ওই গ্যাসের কাউন্টার চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন ধুলিয়ানের এক ব্যবসায়ী রমেশ মেমানিকে। রমেশবাবু বলেন, “দোকানটি আমিই লিজ নিয়ে চালাচ্ছি। ধুলিয়ানে গ্যাসের চরম সঙ্কট রয়েছে। এই সঙ্কটের কারণ দুর্গাপুর থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহের ঘাটতি। ১৫ হাজার গ্রাহক ধুলিয়ানে। সেপ্টেম্বরে সিলিন্ডার এসেছে ৯৪৫০টি। আর অক্টোবরে এসেছে ৭৩০০। তবে কিছু সিলিন্ডার তো এ দিক ও দিক হয়।”

রমেশবাবুর এই সাফাই মানতে চাননি সামশেরগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি কাউসার আলি। তিনি বলেন, “১৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৫ হাজারই ভুয়ো গ্রাহক। ওই ভুয়ো গ্রাহকদের নামে গ্যাস তুলে কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর সেই কারণেই গ্যাস না পেয়ে এলাকার গ্রাহকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। পুলিশ ও পুরসভা এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না করলে কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠবে।”

ধুলিয়ানের উপ পুরপ্রধান দিলীপ সরকার বলেন, “গ্যাসের ডিলারের কাছ থেকে একটা তালিকা নিয়ে এসেছে পুরসভা। সেই তালিকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালানো হবে। তা হলেই আসল ছবিটা বেরিয়ে আসবে।” ধুলিয়ানে ওই কোম্পানির গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় দুর্গাপুর থেকে। গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন ওই সংস্থার দুর্গাপুরের অধিকর্তা বিভাস মণ্ডল। ওই কোম্পানির তরফে জানানো হয়, মুর্শিদাবাদ-সহ এ রাজ্যের ৫টি ও ঝাড়খন্ডের ২৫টি জেলায় গ্যাস পাঠানো হয় দুর্গাপুর থেকে। ধুলিয়ান থেকে গ্যাস সঙ্কট নিয়ে কোনও অভিযোগ তাদের কাছে যায়নি। তা ছাড়া গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও ঘাটতি নেই। ধুলিয়ানে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিলে তার দায় সেখানকার ডিলারের। ২০-২৫ দিনের মধ্যেই গ্রাহকের গ্যাস বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। গোটা বিষয়টি তাঁরাও খতিয়ে দেখছেন বলে জানান ওই কোম্পানির এক পদস্থ আধিকারিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dhulian cooking gas supply unavailable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE