কান্দি পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর অপহরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন দু’জন গ্রেফতার হয়েছে বলে আদালতে জানাল রাজ্য।
অপহরণের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দেবজ্যোতি রায় নামে ওই কাউন্সিলর কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের করেছেন, বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে। সরকারি কৌঁসুলি শুনানির শুরুতেই মামলার কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করেন। এর পরে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত কান্দি থানার ওসি-র দেওয়া একটি রিপোর্ট পেশ করে জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর অন্য একটি মামলায় ওই দুই দুষ্কৃতীকে বীরভূম পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আদালতে লক্ষ্মীবাবুর দাবি, প্রাথমিক জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে, মুক্তিপণ চেয়ে একটি অপহরণের ঘটনায় তারা যুক্ত। সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্ত এর পরে আদালতে জানান, কান্দি থানার তদন্তকারী অফিসার ওই দুই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায়। তিনি আরও জানান, আজ, শুক্রবার তাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হবে। আদালতে সরকারি কৌঁসুলির দাবি, ধৃতদের জেরা করে অপহরণের ঘটনায় জড়িত বাকিদের সন্ধান মিলতে পারে। শুনানির পরে দেবজ্যোতিবাবু বলেন, “আদালত আছে বলে আমি এখনও আছি। কিন্তু কান্দির আইসি থাকলে আমি থাকতাম কি না সন্দেহ।”
গত ১৭ফেব্রুয়ারি কান্দি পুরসভার বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর দেবজ্যোতি রায়কে দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভায় অনাস্থাকে ঘিরে ওই অপহরণ করায় শাসকদল। ওই পুরসভায় ১৮টি আসনের মধ্যে গত পুরভোটে কংগ্রেস ১৩টি, তৃণমূল তিনটি ও বামসমর্থিত নির্দল দু’টি আসন পেয়েছিল। প্রাক্তন পুরপ্রধানকে গৌতম রায়কে সরিয়ে পুরপ্রধান করা হয় কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারকে। কয়েক মাস পরেই তৃণমূলের তিন কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে গৌতমবাবু তাঁর অনুগামী পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর এবং দেবজ্যোতিবাবুকে নিয়ে মোট ন’জন অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। পরে গৌতমবাবু এবং ওই পাঁচ কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
যদিও দেবজ্যোতিবাবু এবং তাঁর স্ত্রী তথা পুরসভারই নির্দল কাউন্সিলর সান্ত্বনাদেবী আর তৃণমূলে যোগ দেননি। উল্টে অনাস্থার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে ওই দুই নির্দল কাউন্সিলরকে দলে টেনে নেয় কংগ্রেস। সান্ত্বনাদেবীকে উপ-পুরপ্রধান করে পরিস্থিতি সামালও দেয়। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত ওই অনাস্থার তলবি সভার ঠিক দু’দিন আগেই দেবজ্যোতিবাবুকে অপহরণ করা হয়। তার পরেই ওই অপহরণ তৃণমূল করিয়েছে বলে দাবি করে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। তলবি সভা হয়ে যাওয়ার আগে কংগ্রেসের আরও এক কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে তৃণমূলের ৯ জন এবং নির্দল কাউন্সিলর নিয়ে কংগ্রেসেরও ন’জন কাউন্সিলর হয়। যদিও তলবি সভার আগে দেবজ্যোতিকে অপহৃত হয়ে থাকায় কংগ্রেসের পক্ষে আট সদস্য এবং তৃণমূলে ন’জন হয়ে দাঁড়ায়। তলবি সভায় তৃণমূল জয়ী হলেও দেবজ্যোতিবাবু অপহৃত হওয়ার কারণে এখনও পর্যন্ত পুরবোর্ড গঠন হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশেই উপ-পুরপ্রধানই ওই পুরসভার ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধানের কাজ সামলাচ্ছে।
ঘটনা হল, অপহরণের পরেই দেবজ্যোতিবাবুর অনুগামীরা তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কান্দি থানায় ধর্নায় বসে পড়েছিল। তদন্তে নেমে মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন দেখে পুলিশ জানতে পারে, অপহরণকারীরা দেবজ্যোতিবাবুকে বড়ঞার দিকে নিয়ে গিয়েছে। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর বড়ঞা থানা এলাকার মজলিশপুর এলাকায় কুয়ে নদীর সেতুর ধার থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। পরের দিন কান্দি আদালতে বিচারকের কাছে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে গোপন জবানবন্দি দেন দেবজ্যোতিবাবু। যদিও কী কারণে ওই অপহরণ, কারা তাতে জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট করতে পারেনি পুলিশ।
এ দিকে, গত ২৯ অগস্ট রামপুরহাটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১১ লক্ষ টাকা তুলে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মুর্শিদাবাদের ধান ব্যবসায়ী মেহেবুব শেখ। পথে রামপুরহাট-পারুলিয়া সড়কে রামভদ্রপুরের কাছে মোটরবাইক আটকে খড়গ্রাম থানার পার্বতীপুরের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর উপরে চড়াও হয় জনা চারেক দুষ্কৃতী। তাঁকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে ওই দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে পুলিশ গত শনিবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার খড়সুনা এলাকা থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম আজিম খান এবং দুলু শেখ। দু’জনেরই বাড়ি বড়ঞা থানার ভবানীনগরে।
ধৃতদের প্রাথমিক জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দু’জন দেবজ্যোতিবাবুর অপহরণের ঘটনাতেও জড়িত। দু’জনেই বর্তমানে রামপুরহাট আদালতের নির্দেশে তারাপীঠ থানার পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ে যুক্ত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’’ আদালতের নির্দেশে ওই দু’জন বর্তমানে বীরভূম পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তার মেয়াদ এখনও ফুরোয়নি। তাই কান্দি থানার অফিসার ইনচার্জের আবেদন এখনও আদালতে বিবেচনাধীন।
এ দিন হাইকোর্টে দেবজ্যোতিবাবুর আইনজীবী আশিস সান্যাল এবং প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় সরকারি কৌঁসুলির কাছে পুলিশের পেশ করা রিপোর্টের কপি চান। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে লক্ষ্মীবাবু তা দিতে রাজি হননি। রাজ্যের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দত্ত জানিয়ে দেন, পুলিশি হেফাজতে নিয়ে ধৃতদের জেরা করার সুযোগ দেওয়া হোক। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy