মোবাইল ফোনের ‘কল-রেকর্ড’-এর সূত্র ধরে এ বার এগোতে চাইছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের সূত্রে যে জঙ্গি-চক্রের হদিস মিলেছে, তার জাল কোথায় ছড়িয়ে এবং ঠিক ক’জন তাতে জড়িত, তা খুঁজে বার করতে তদন্তের দ্বিতীয় পর্যায়ে ওই তথ্যের উপরে অনেকটাই নির্ভর করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, গত অক্টোবরে পটনায় নরেন্দ্র মোদীর সভায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও গত বছর জুলাইয়ে বুদ্ধগয়ার ধারাবাহিক বিস্ফোরণে জড়িতদের একাংশকে গ্রেফতার করতে মোবাইলের ‘কল-রেকর্ড’ অনেকটাই সহায়ক হয়েছিল। তা ছাড়া, নথি ও কাগজপত্র-সহ এখনও পর্যন্ত যে সব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সে সব থেকে কোনও সূত্র মেলে কি না, সেটা এখন তদন্তকারীরা খুঁটিয়ে দেখবেন।
এনআইএ-র এক অফিসার বলেন, “এ বার উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। বিস্ফোরণে নিহত, ধৃত ও পলাতকদের মোবাইল ফোনের কল-রেকর্ড থেকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে।” তিনি জানান, তিরিশটিরও বেশি মোবাইল নম্বরের ‘কল-রেকর্ড’ আপাতত ঘেঁটে দেখছেন গোয়েন্দারা। টানা এগারো দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, বিস্ফোরক ও বোমা-সহ নানা সামগ্রী এবং কাগজপত্র উদ্ধার করার পরে মঙ্গলবার, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে তাদের প্রথম পর্যায়ের তদন্ত শেষ হল বলে এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের তদন্ত-রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জমা দেবে এনআইএ। ২ অক্টোবর বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৯ অক্টোবর এনআইএ-কে তদন্তভার দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে ১১ অক্টোবর এনআইএ তদন্তে নামে।
এনআইএ-র তিন সদস্যের একটি দল এ দিন সকালে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানায় যায়। সেখানে রাজ্য পুলিশের অফিসারদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করার পরে, এনআইএ-র অফিসারেরা বেলডাঙার সন্দেহজনক জঙ্গি-ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন বই, কাগজপত্র এবং অন্য সরঞ্জাম চারটি ট্রাঙ্কে করে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন।
ইতিমধ্যে খাগড়াগড়-কাণ্ডে সন্দেহভাজন, বর্ধমানের শিমুলিয়া গ্রাম থেকে পলাতক বোরহান শেখের মা আসুরা বিবি ও কুলসুনো গ্রাম থেকে পলাতক আবুল কালামের দাদা সালামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়ে আগামী সপ্তাহে তলব করেছে এনআইএ। তা ছাড়া, দিন কয়েক আগে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা ও নিগনের নির্মীয়মাণ বাড়ির (গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সেটি মাদ্রাসা-ও হতে পারে) ‘স্কেচ-ম্যাপ’ চেয়ে মঙ্গলকোটের বিডিও সুশান্তকুমার মণ্ডলকে চিঠি পাঠিয়েছিল এনআইএ। আজ, বুধবার ওই প্লটগুলি ঘুরে ‘স্কেচ-ম্যাপ’ তৈরি করার কথা ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের কর্মীদের।
খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত রাজিয়া বিবি, আলিমা বিবি ও হাসেম মোল্লাকে বুধবারই আদালতে হাজির করানোর কথা। এনআইএ-র তদন্তকারীদের একাংশ জানান, ধৃতদের মধ্যে হাসেমকে ফের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানানো হবে। আর এক ধৃত, আবদুল হাকিম এখনও এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন। তাকে দু’-এক দিনে সেখান থেকে ছাড়া সম্ভব কি না, সে নিয়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনআইএ-র অফিসারেরা আলোচনা করছেন।
তদন্তে নেমে এনআইএ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও (চার জনকেই ধরেছে রাজ্য পুলিশ), তারা দায়িত্ব নেওয়ার পরে তদন্ত যে ‘অন্য মাত্রা’ পেয়েছে, তা স্বীকার করছেন রাজ্য পুলিশ তথা সিআইডি-র শীর্ষ-কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, তদন্ত-ভার নেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই আবদুল হাকিমকে জেরা করে এনআইএ জানতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে বসে জঙ্গিরা ভারত ও বাংলাদেশে বড়সড় নাশকতার ছক কষেছে। তা ছাড়া, বর্ধমানের বাদশাহি রোডের ডেরায় এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড)-র সহায়তায় তল্লাশি চালিয়ে ৩৫টি দেশি গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার করেছে এনআইএ, যা সিআইডি পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy