(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আপাত দৃষ্টিতে ধাক্কা খেয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কিন্তু তলায় তলায় ‘শাপে বর’ দেখছে সিপিএম! নীতীশ কুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপের জেরে এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার দরজা খোলার রাস্তা সহজ হল বলে মনে করছে তারা।
বিহারে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে বেরিয়ে নীতীশ যখন ইস্তফা দিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের তরফে রবিবার ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন, সিপিএমের তখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলছে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে। নীতীশ জোট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক বিড়ম্বনার ধাক্কা থাকলেও সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে যাদের নিয়ে সংশয় ছিল, তারা আস্তে আস্তে নিজেদের পথ বেছে নিচ্ছে। সেই ভাবেই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা লড়ার কথা স্পষ্ট করতে শুরু করেছেন। এর পরে বাংলা-সব বিভিন্ন রাজ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার কাজ সহজ হবে বলে সিপিএমের আশা। শুধু তা-ই নয়, বাংলায় রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’য় এর পরে আরও বেশি করে শামিল হবে সিপিএম। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকতে পারেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, যুব সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
কেরলে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের রফা হওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তবে অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেসের হাত ধরার ক্ষেত্রে কেরলের সিপিএম নেতৃত্বও এ বার আপত্তির সুর তুলছেন না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে আপত্তি তাঁরা তুলেছিলেন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘পাঁচ বছর আগের সঙ্গে এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির তফাত অনেক। প্রথমত, বিজেপিকে রুখতে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে নিয়ে একসঙ্গে লড়াইয়ের বিষয়টা পার্টি কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়ে রয়েছে। তা ছাড়া, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করছে, তার মোকাবিলায় যেখানে যেখানে সম্ভব, বিরোধীদের জোট বেঁধেই লড়তে হবে।’’ মাসদুয়েক আগে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের সময়ে আসন-রফার প্রশ্নে কংগ্রেসের যে মনোভাব ছিল, এখন ‘ইন্ডিয়া’য় কোণঠাসা হয়ে তারা তুলনায় ‘নমনীয়’ হবে— কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এমন মতই প্রকাশ করছেন বিভিন্ন রাজ্যের সিপিএম নেতারা।
বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক আগেই দিয়ে রেখেছে সিপিএম। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে এসে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন-রফা নিয়ে আলোচনা ও চর্চা শুরু হওয়ায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সঙ্গে বিধান ভবনের বার্তা বিনিময় থমকে গিয়েছে। কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত কী করে, তা দেখে পা ফেলতে চাইছেন সিপিএম নেতারা। সূত্রের খবর, দলের পলিটব্যুরোয় প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, জোট ভাঙার দায় নিতে না চেয়ে এআইসিসি এখনও মমতাকে সঙ্গে রাখার বার্তা দিচ্ছে। তবে রাজ্যে দু’দলের আসন-রফা সম্ভবত হবে না। আবহ একটু স্পষ্ট হলেই কংগ্রেসের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরুর সঙ্কেত দলের রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়ে রাখছে পলিটব্যুরো। পাশাপাশিই, তৃণমূল না থাকায় বাংলায় রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’য় শামিল হওয়াও সিপিএমের পক্ষে সহজতর হয়েছে। শিলিগুড়িতে এ দিনই দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার রাহুলের যাত্রায় গিয়েছিলেন। আবার অন্য দিকে, নীতীশ বেরিয়ে যাওয়ায় বিহারে মহাজোটের বাকি শরিক আরজেডি, কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে বেশি আসন ভাগ হবে এবং জেডিইউয়ের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র ফায়দা তোলার চেষ্টা করা যাবে বলে সিপিএমের মত।
সূত্রের খবর, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের পর্যালোচনা করতে গিয়ে কংগ্রেসের তখনকার ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে অভিযোগই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নেতারা। বিশেষত, রাজস্থানে বিধায়ক শূন্য হয়ে যাওয়া বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে সিপিএম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy