ফরওয়ার্ড ব্লক দফতরে বসে অশোক ঘোষ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌভ্রাতৃত্বের স্মৃতি এবং তাকে ঘিরে বিতর্ক এখনও টাটকা। তার মধ্যেই বাম শরিক ফ ব-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাসের বাড়িতে হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজনীতি। শনিবার রাতের ওই হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন হরিপদবাবুর স্ত্রী অপর্ণা বিশ্বাস। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। যদিও শাসক দল দাবি করেছে, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। কিন্তু ফ ব-র জেলা নেতৃত্বই প্রশ্ন তুলছেন, দলের রাজ্য সম্পাদক যখন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ছোট বোনে’র মর্যাদা দিচ্ছেন, নিচু তলায় নেতা-কর্মীদের তখন কেন শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হতে হবে?
শুধু ফ ব-ই নয়, শনিবার রাত ও রবিবার সকাল মিলে সিপিএমের উপরে হামলারও কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। নদিয়ার চাকদহে শনিবার রাতে সিপিএমের একটি শাখা কার্যালয়ে হামলা চালায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। কিছু টাকাও লুঠ হয়েছে বলে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। বাঁকুড়ার জয়পুরে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক বিশ্বনাথ দে-র ভাই শম্ভুনাথকে এ দিন সকালে মারধর করা হয়েছে। হাতে ও পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে বিষ্ণুপুরের হাসপাতালে ভর্তি তিনি। দুই ক্ষেত্রেই সিপিএমের অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। এবং দু’টি ঘটনাতেই তাদের যোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল।
তবে এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি হইচই বেধেছে ফ ব নেতার বাড়িতে হামলা নিয়েই। জগদ্দলের প্রাক্তন বিধায়ক হরিপদবাবুর শ্যামনগরের গাঙ্গুলিপাড়ার বাড়িতে শনিবার তাঁর ছেলের খোঁজে এসে হামলা চালায় এক দল যুবক। হামলাকারীদের বাঁশের ঘায়ে মাথায় চোট পান হরিপদবাবুর স্ত্রী। ওই সময় তাঁদের বাড়িতে উপস্থিত কংগ্রেসের এক যুব নেতার উপরেও হামলা হয়। জখম অপর্ণাদেবীকে এ দিন বাগুইআটির একটি নার্সিং হোমে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন শ্যামনগরে অবস্থানে বসেন স্থানীয় বাম নেতৃত্ব। জগদ্দল থানায় বামেদের একটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির মধ্যেই ওই হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে ‘কালা দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছেন ফ ব-র জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্বও। ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক ও পুর-চেয়ারম্যান অর্জুন সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, প্রাক্তন বিধায়কের ছেলের সঙ্গে কিছু যুবকের বিরোধের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, হামলার প্রেক্ষিতে এ দিন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানির উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন জেলা কমিটির ৫৭ জন সদস্য। অথচ গোটা জেলা কমিটিই ভেঙে দিয়ে সরল দেবের নেতৃত্বে অ্যাড হক কমিটি গড়েছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব! তাঁরা দলের মধ্যে থেকে তৃণমূলের সঙ্গে আপস করেননি বলেই বারবার আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে আর যাঁরা শাসক দলের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য পুরভোটে কিছু আসনে ঠিকমতো মনোনয়ন জমা দেননি, তাঁদেরই মাথায় বসিয়ে রাখছেন রাজ্য নেতৃত্ব— এমন ক্ষোভ জানিয়ে রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবুকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বস্তুত, প্রতিবাদে দ্রুত পথে নেমে হরিপদবাবু, মোর্তাজা হোসেন, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আব্দুল বারিরা দেখাতে চাইছেন, জেলায় প্রকৃত ফ ব কারা! একই সময়ে উত্তরবঙ্গে দিনহাটা-১ ব্লকের বালিকা বাজারে ফ ব-র কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তছনছ হওয়া ঘটনাস্থলের ছবি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে স্থানীয় ফ ব বিধায়ক উদয়ন গুহ মন্তব্য করেছেন, ‘দিনহাটায় ভাইফোঁটা’! যার ফলে হামলার ঘনঘটায় চাপে পড়ে গিয়েছেন প্রবীণ অশোকবাবুই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy