দুর্ঘটনায় মৃত মোহন। নিজস্ব চিত্র।
কারও হাতে ছোট লাঠি, কারও হাতে টর্চ, সঙ্গে রয়েছেন পুলিশকর্মীরাও। কেউ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে করজোড়ে বলছেন, “দেড় কিলোমিটার পথ মোহনের (কচ্ছপ) করিডর। সতর্ক ভাবে গাড়ি চালাবেন।” কেউ কেউ নজর রাখছেন রাস্তার দিকে। ‘মোহন’ দেখলেই সে পাকা সড়ক পার না হওয়া পর্যন্ত নজর রাখছেন তার দিকে। কোচবিহারের বাণেশ্বরে ‘মোহন’ বাঁচাতে এমন ভাবেই পাহারার কাজ শুরু করেছে ‘মোহন রক্ষা কমিটি’।
পুলিশের সহযোগিতায় চলছে ওই পাহারা। দিন কয়েক আগেই পথ দুর্ঘটনায় দু’টি ‘মোহন’-এর মৃত্যু হয়েছে। তার পরেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত বছর পথ দুর্ঘটনায় এবং অসুস্থ হয়ে মোট ৬১টি ‘মোহন’-এর মৃত্যু হয়েছিল। এ বারে যাতে সে পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিয়ে সতর্ক আছেন সবাই। ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র সভাপতি তথা কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য পরিমল বর্মণ বলেন, “মোহনদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। সে জন্য যা-যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব। দিন-রাত মিলিয়ে আমাদের আট জন সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে পুলিশকর্মীরাও থাকছেন।”
তিনি জানান, মে মাসেই সাধারণত গর্ভবতী হয়ে পড়ে ‘মোহন’-এরা। সেই সময় ডিম পাড়তে ‘মোহন’-এর দল এক জলাশয় থেকে রাস্তা পার হয়ে আর এক জলাশয়ে যায়। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। কিছু সময় পরে বাচ্চারা বড় হয়ে পুরনো জলাশয়ে ফিরতে শুরু করে। সে সময়েও দুর্ঘটনা ঘটে। আগামী দুর্গাপুজো পর্যন্ত ‘মোহন’-দের যাতায়াত বজায় থাকবে। এই সময় তাই নজর রাখা প্রয়োজন। বাণেশ্বরের শিবদিঘিতেই মূলত ‘মোহন’-দের বাস। ওই দিঘি ও ‘মোহন’-দের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। ওই দিঘি থেকে ‘মোহন’ ছড়িয়ে পড়েছে বাণেশ্বরের নানা জলাশয়ে। সব মিলিয়ে সেই সংখ্যা এক হাজারের কম নয় বলে দাবি ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, শিবদিঘির ‘মোহন’-দের দেখভাল ঠিক মতো হয় না। অসুস্থ হয়ে অনেক ‘মোহন’-এর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, ‘মোহন’-এরা প্ৰতিনিয়ত রাজ্য সড়ক পার হয়ে চলাচল করে। তখনই গাড়ি চাপা পড়ে তাদের অনেকে। তাই বাণেশ্বরের দেড় কিলোমিটার রাস্তা মোহন চলাচলের করিডর ঘোষণা করে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়। এই অবস্থায় ‘মোহন’-দের সুরক্ষার দাবিতে গত ডিসেম্বর মাসে বন্ধ পালিত হয় বাণেশ্বরে। তার পরে রাস্তার কিছু অংশে ‘স্পিড ব্রেকার’ বসানো হয়েছে। ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন শীল বলেন, “রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলে এ সমস্যা অনেকটা মিটবে।” এ বিষয়ে প্রশাসনের তরফেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy