বিক্ষোভ: হাসপাতাল সুপারের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন চুমকির পরিবারের লোকেরা। এক আত্মীয়ের কোলে তাঁর সদ্যোজাত শিশু কন্যা। মঙ্গলবার বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র
এক প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল সুপারকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান মৃতার পরিবারের লোকেরা। গোলমাল এতটাই বেড়ে যায় যে, শেষে পুলিশ ডাকতে হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্স মৃতার আত্মীয়দের কাছে ক্ষমা চান। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলে উত্তেজনা কমে।
মৃত প্রসূতির নাম চুমকি মালো চৌধুরী (১৯)। শ্বশুরবাড়ি বালুরঘাট থানার পার পতিরাম হাটখোলা এলাকায়। বাপের বাড়ি হিলিতে। বছর দেড়েক আগে তাঁর রঞ্জিত চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়। রঞ্জিত পেশায় শ্রমিক। সোমবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে চুমকিকে বালুরঘাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, সকাল ১১টা নাগাদ একবার রোগীকে এসে দেখে যান চিকিৎসক। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য নার্সরা রোগীর পেটে ‘পুশ’ করতে থাকেন বলেও দাবি রোগীর পরিবারের। এতেই সন্ধ্যা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় রোগীর। এর পর চিকিৎসকের কল বুক করা হয়। কিন্তু ওই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ দে অনেক পরে হাসপাতালে আসেন বলে দাবি রোগীর পরিবারের। রাতেই অপরাশেন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় রোগীকে। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে অস্ত্রোপচার করার পর চুমকিদেবী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর পরেই শারীরিক অবনতি ঘটে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাতে চুমকিকে দু’ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকায় তাঁকে সিসিইউতে রেফার করা হয়। মঙ্গলবার ভোর রাতে হাসপাতালে মারা যান চুমকি। এর পরই মৃতের পরিবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। এ দিন সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে চুমকির পরিবারের লোকেরা হাসপাতাল সুপারকে ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। যায় বালুরঘাট থানার পুলিশও। তাদের ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। বিষয়টি জানতে ডেকে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট নার্সকে।
মৃতের স্বামী রঞ্জিত চৌধুরী জানান, সকালে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও তাঁকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয় রাতে। তার আগে নার্স ও আয়ারা মিলে স্বাভাবিক প্রসব করার জন্য স্ত্রীর পেটে হাত দিয়ে ‘পুশ’ করতে থাকেন। তাতেই রক্তক্ষরণ শুরু হয় বলে তাঁর দাবি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে চুমকির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় বলেও তাঁর দাবি। পরে তাঁকে যখন সিসিইউ-তে পাঠানোর সময়ে ওই চিকিৎসক সাদা কাগজে টিপ সই করিয়ে নেন বলে অভিযোগ। ভোর চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় চুমকির। চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে দোষী নার্স এবং অন্যদের শাস্তির দাবি করছেন তারা। পরে অবশ্য অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্স মৃতার আত্মীয়দের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেন।
সে কথা জানিয়ে বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার তপকুমার বিশ্বাস জানান, অভিযোগের বিষয়টি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকে জানান হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy