শিল্প তালুকে দুষ্কৃতী হামলায় দাবি উঠল স্থায়ী ফাঁড়ির। শুক্রবার রাতে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে শিল্প তালুকের এক অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ৭ জন দুষ্কৃতী সশস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হল বিক্রম সরকার, সুদেব সরকার এবং শুভঙ্কর সরকার। তাঁদের বাড়ি পুরাতন মালদহের রাঙামাটিয়া এলাকায়। বিক্রম ও সুদেবকে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত এবং অপর জন নাবালক বলে দাবি করায় তাকে ছ’দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন কারখানার গাড়ির চালক ও ২ শ্রমিক। আহতেরা চিকিৎসাধীন মালদহ মেডিক্যালে। পুলিশ জানায়, আহত প্রসেনজিৎ সরকার গাড়ি চালক। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরামে। এ ছাড়া রয়েছেন বিকাশ সরকার এবং সমাপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকাশবাবুর বাড়ি পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ির খয়রাতিপাড়ায় এবং সমাপ্তবাবুর বর্ধমানের কাটোয়ার মাধাইতলা গ্রামের বাসিন্দা। দু’জনেই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।
শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ শিল্পতালুকের সমস্ত শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী সংগঠন জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা হুমকি দেন, শিল্প তালুকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করা হলে পরবর্তী কালে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মালদহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বলেন, ‘‘শিল্প তালুকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। যার জন্য এ দিন দুষ্কৃতীরা ঢুকে এমন হামলা চালাল। তিন জন গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন।
এ দিনের ঘটনার পর শ্রমিকদের পাশাপাশি আমরাও খুব আতঙ্কিত। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না করলে আমরা শিল্পতালুকে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হব।’’ ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘শিল্প তালুকে আমরা স্থায়ী ভাবে ফাঁড়ির দাবি জানাচ্ছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হব।’’
মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশি হেফাজত চেয়ে এ দিন ধৃতদের আদালতে পেশ করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। শিল্পপতিদের দাবি দাওয়া খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের প্রথম দিকে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরের শিল্পতালুকে একটি অ্যালুমিনিয়ামের কারখানা খোলেন ইংরেজবাজারের মনস্কামনা পল্লি এলাকার বাসিন্দা মনীষ পোদ্দার। কারখানায় অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, বালতি, কড়াই প্রভৃতি সামগ্রী তৈরি করা হয়। সেখানে মোট ১২ জন শ্রমিক রয়েছেন। কারখানার শ্রমিকদের একাংশ জানান, এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ এক শ্রমিক শৌচাগারে গেলে তাঁর মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক। তাকে ধরা হলে বচসা শুরু হয়। শ্রমিকদের একাংশ মারধর করে যুবককে ছেড়ে দেন।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধে ৬টা নাগাদ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তা রক্ষী ছুটিতে রয়েছেন। তাই বিকাশ ও সমাপ্ত কারখানা পাহারা দেওয়ার জন্য ছিলেন। একই সঙ্গে প্রসেনজিৎ পণ্যবোঝাই করে হরিশ্চন্দ্রপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় আচমকা জনা সাতেক দুষ্কৃতী চাকু, হাঁসুয়া, ক্ষুর নিয়ে চড়াও হয়ে ওই তিন জনকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে বলে অভিযোগ। তাঁদের চিৎকারে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকেরা ছুটে গেলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের তড়িঘড়ি চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয় মেডিক্যাল কলেজে। রাতেই মালদহ থানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy