রাস্তার দু’ধার জুড়ে নিম, অর্জুন, অমলতাস, হরতকির ঠাণ্ডা আঁচলের ছায়া। মধ্যে পলাশের রঙিন খুনসুটি। রাজাদের আমলে কোচবিহারের নানা প্রান্তের এ হেন দৃশ্যে পথচারিরা যেমন উপকৃত হতেন, তেমনই এ সব ভেষজ গাছ চিকিত্সার কাজেও লাগত।কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভেষজ গাছের একটি উদ্যান পর্যন্ত করা হয়, যা কবিরাজ বাগান নামে পরিচিত।
সত্তরের দশকের পর থেকে শহর সম্প্রসারণ, নর্দমা তৈরি, জনসংখ্যার চাপ, নানা কারণে এ সব গাছ কমতে থাকে। রাজাদের আমলের সেই ধারা ফেরাতে কোচবিহার জুড়ে ভেষজ গাছ চাষে উত্সাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা উদ্যানপালন দফতর। চলতি বছরে গোটা জেলায় অন্তত তিরিশ হাজার ভেষজ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। উদ্যান পালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “ভেষজ গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। জাতীয় ভেষজ মিশন প্রকল্পের মাধ্যমে আবার সে সব গাছ লাগিয়ে কোচবিহারের পুরনো দিন ফিরিয়ে আনতে চাইছি। আগামী বর্ষার মরসুমে অন্তত তিরিশ হাজার ভেষজ চারা লাগান হবে। এ জন্য চারা তৈরি-সহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
উদ্যান পালন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিশ্ব বাজারে ভেষজ গাছের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে ৩ লক্ষ মার্কিন ডলারের আর্থিক মূল্যের ভেষজ সামগ্রী বিক্রির বাজার তৈরি হবে। ফলে ভেষজ চাষে বিকল্প আর্থিক আয়ের সুযোগও থাকছে। জেলার প্রতিটি মহকুমায় ওই তথ্য তুলে ধরে আগ্রহীদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। প্রতিটি মহকুমা থেকে গড়ে ৬০ জন চাষিকে নিয়ে মোট ৩০০ জনকে ভেষজ গাছ লাগানো, রক্ষণাবেক্ষন সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তুফানগঞ্জের বলরামপুর এলাকায় একটি সংস্থার সহযোগিতায় আমলকি, নিম, বহেড়া, হরতকি, গোলমরিচের মত নানা প্রজাতির ওষধি গাছের চারা তৈরির কাজ ইতিমধ্যে অনেকটা এগিয়েছে।
ওই দফতরের কর্তারা জানান, পর্যায়ক্রমে টানা ৫ বছর অন্যান্য প্রজাতির ভেষজ চারা বিতরণ করা হবে। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে জেলায় অন্তত দেড় লক্ষ চারা লাগান হবে। সেই সঙ্গে তুলসী, সর্পগন্ধা, কালমেঘ, ঘৃতকুমারীর মতো নির্দিষ্ট কিছু ভেষজ গাছের বাণিজ্যিক ভিত্তিক চাষাবাদেও থাকছে। আর্থিক অনুদানের সুযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় ভেষজ মিশন প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
উদ্যান পালন দফতরের ওই উদ্যোগে খুশি পরিবেশপ্রেমীরা। কোচবিহারের ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “রাজাদের আমলে কোচবিহারের প্রায় সমস্ত বড় রাস্তার দু’ধারে ভেষজ গাছের সারি ছিল। প্রায় হারিয়ে যাওয়া সে সব গাছ ফিরিয়ে নিয়ে আসার এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু চারাগাছগুলি যাতে শৈশবে নষ্ট না হয়ে যায়, সে ব্যাপারেও সজাগ নজর রাখা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy