Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাঁটাতারের দু’পাশেই রয়ে গিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী

এখানেও দুই দেশে ভালবাসার দু’জন মানুষ। সীমান্তের দু’পারে প্রিয়জনকে কাছে না পাওয়ায় যন্ত্রণা কাতর তাঁরাও। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে প্রিয়জনের সঙ্গে সৌজন্য কথাবার্তা, সুস্থতার খোঁজখবরে ভরসা স্রেফ ফোন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

এ যেন এক অন্য ‘বীরজারা’র কাহিনি।

এখানেও দুই দেশে ভালবাসার দু’জন মানুষ। সীমান্তের দু’পারে প্রিয়জনকে কাছে না পাওয়ায় যন্ত্রণা কাতর তাঁরাও। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে প্রিয়জনের সঙ্গে সৌজন্য কথাবার্তা, সুস্থতার খোঁজখবরে ভরসা স্রেফ ফোন। তাঁদের একজন স্বপ্নারানি রায় (বর্মন)। আপাতত এ পার বাংলার মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়িতে তৈরি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য তৈরি অস্থায়ী শিবিরের বাসিন্দা। অন্য জন বলরাম বর্মন, ওপার বাংলার পাটগ্রাম যাঁর ঠিকানা। নাগরিকত্বহীন অবস্থায় ওই দম্পতি ছিলেন বাঁশকাটা ছিটমহলের বাসিন্দা।

ছিটমহল বিনিময়ের পর স্ত্রী ভারতীয়, স্বামী বাংলাদেশি নাগরিক হয়েছে। স্বামীকে এদেশে ফেরাতে, নাগরিকত্ব আদায়ে বহু চিঠি চাপাটিও করেছেন স্বপ্নাদেবী। কিন্তু আখেরে লাভ হয়নি। ভালবাসার দিনে সীমান্তের দু’পারের দূরত্বটা তাদের কাছে আরও বেশি হয়ে উঠেছে।

মেখলিগঞ্জ মহকুমার অস্থায়ী শিবিরের আবাসিক স্বপ্নারানি তাই বিষণ্ণ। স্বপ্নাদেবীর কথায়, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র কথা একটু আধটু শুনেছিলাম। সেভাবে আগে ভাবিনি। পরিচিত অনেকেই ওই দিনের ব্যাপারে আলোচনা করতে শোনার পরে তাই মনটা খারাপ লাগছে।’’ তিনি বলেন, “এখন বয়সও বেড়েছে ওঁর। এমনিতেই শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা হয়। মঙ্গলবার বিশেষ দিনে ফোন করে কথা বলব ঠিক করেছি।” বলরামবাবুর সঙ্গে অবশ্য মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর পরিচিতদের কয়েকজন জানান, ওপারে শরীরটা থাকলেও তাঁর মনটা এপার বাংলাতেই সব সময় পড়ে থাকে। ভারতীয় ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিলের উপদেষ্টা তথা ছিটমহল বিষয়ক গ্রন্থের লেখক দেব্রবত চাকি বলেন, “ছিটমহল বিনিময়ত্তোর পর্বের ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তেও স্বামী-স্ত্রী, দু’জন দুই দেশের নাগরিক। দ্রুত সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে সরকারের উচিত ছিল ওই ত্রুটি বিচ্যুতি মেটান।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১১ সালের যৌথ জনগণনার তালিকা অনুযায়ী সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ঠিকানা বদলানোর ব্যাপারে মতামত নেওয়া হয়। ওই মতামতের ভিত্তিতেই ছিটমহল বিনিময়ের পর বাসিন্দারা পছন্দ মতো নাগরিকত্ব নেন। ওই তালিকায় নাম না থাকায় সমস্যা হয়। স্বপ্নাদেবী জানান, প্রায় এক বছরের থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে মেখলিগঞ্জের শিবিরে থাকলেও স্বামীর ঠিকানা এখন বাংলাদেশ। কিছু দিন আগে ভিসা করে এসেছিলেন তিনি। স্বামীকে কাছে ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রশাসন সব মহলেই নানা ভাবে আর্জি জানান। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের এক্তিয়ারাধীন।’’ মেখলিগঞ্জের বিডিও বিরুপাক্ষ মৈত্র বলেন, “বিষয়টি জানি। ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানান হয়েছে।”

পর্দায় ‘বীরজারা’র ‘প্রেম’ জিতেছিল। কাঁটাতারের বাঁধা ঘুচিয়ে কাছাকাছি আসবেন কি ওঁরাও?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Human Being Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE