মঙ্গলবার কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার বহুতলে আগুন লাগার ঘটনা উদ্বেগ উস্কে দিল শিলিগুড়িতে।
শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় বহুতলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শহরে ১৬ তলা ভবনও তৈরি হয়েছে। মাটিগাড়া এলাকার উপনগরীতে রয়েছে একাধিক বহুতল। অনেক নতুন বহুতলের কাজ শেষের পথে। অথচ এই বহুতলগুলির কোনও একটিতে কলকাতার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের মতো ঘটনা ঘটলে দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া দমকলের আর কিছু করার থাকবে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন না বহুতল কোনও ভবনের ১০ তলা, ১৬ তলায় আগুন নেভাতে বা বাসিন্দাদের বহুতল থেকে উদ্ধার করার উপযুক্ত ‘ল্যাডার’ বা ‘স্কাই লিফট’ নেই শিলিগুড়ি দমকল বাহিনীর। অভিযোগ, কয়েক বছর থেকে এই ধরনের পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করছেন তারা। কলকাতায় সদর দফতরে চিঠিচাপাটিও করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ‘স্কাই লিফট’ বা বহুতলে আগুন নেভানোর মতো পরিকাঠামো মেলেনি। শহরের বাসিন্দারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।
দমকলের দার্জিলিং ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সনৎ মণ্ডল বলেন, “ওই ধরনের পরিকাঠামোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে স্কাই লিফট পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বহুতলগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে যাতে মোকাবিলা করা যায় সে জন্য বহুতল নির্মাণের সময় থেকেই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হচ্ছে।” উত্তরবঙ্গে দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর অবসর নেওয়ার পর দেড় মাস ধরে এই পদ শূন্য রয়েছে। সনৎবাবুকেই জলপাইগুড়ি কোচবিহার এবং দার্জিলিং জেলার দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। কর্মী-আধিকারিকেরও অভাব রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্র নিতে হয়। অগ্নিনির্বাপক এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্ত নির্দেশিকা মানা হলে তবেই ছাড়পত্র দেয় দমকল। কিন্ত অনেক ক্ষেত্রেই সে সব ঠিক মতো গড়ে তোলা হয় না। বছর তিনেক আগে চার্চ রোডের একটি বাড়ির তিনতলার চিলেকোঠার আগুন নেভাতে গিয়েই বেগ পেতে হয়েছিল দমকলকে। বাইরে থেকে তিনতলায় পৌঁছনোর মতো সিঁড়ি ছিল না দমকলের কাছে। তাতেই সমস্যায় পড়তে হয়। কয়েক মাস আগে হিলকার্ট রোডে একটি ব্যাঙ্কের তিনতলায় আগুন লাগে। তখনও দমকলের কর্মীরাও ‘স্কাই লিফট’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। তিনতলা, চারতলার মতো ভবনে আগুন নেভানোর পরিকাঠামোই যেখানে নেই সেখানে দশতলা, ১২ তলা বা ১৫ তলায় আগুন লাগলে দমকল কর্মীরা কী করবেন,তা ভেবেই উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। দমকলের কয়েক জন কর্মী বলেন, “কিছু ঘটলে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। অথচ পরিকাঠামো না থাকলে তখন বিকল্প উপায় খুঁজতে হয়। সব ক্ষেত্রে সে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। দ্রুত ওই সমস্ত অত্যাধুনিক পরিকাঠামো না মিললে দমকলকে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে হবে।” নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সংস্থার কর্ণধাররা জানান, বহুতলে আগুন নেভানোর কাজে দমকলের পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব তাদের ব্যবসারও ক্ষতি করবে। বহুতলে বাড়ি কিনতে উৎসাহ হারাবেন বাসিন্দারা।
শিলিগুড়ির সেবক রোডে বছর কয়েক আগেই গড়ে উঠেছে ১৬ তলা বহুতল। চম্পাসারি এলাকা, দার্জিলিং মোড়ের কাছে ১২ তলা, ১৪ তলার বহুতল গড়ে উঠেছে। মাটিগাড়ার উপনগরীতে অনেকগুলি বহুতল গড়ে উঠেছে। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও নির্মাণ কাজ চলছে। সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় দমকলের কর্তারাও। দমকল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বহুতলের ১২ তলা, ১৫ তলা বা তার চেয়েও বেশি উঁচু থেকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে বা আগুন নেভাতে প্রয়োজন ‘টার্ন টেবল লাডার’। এতে করে দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করতে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন বহুতলের প্রয়োজনীয় উচ্চতায়। বহুতলে আটকে থাকা বাসিন্দাদেরও সহজেই উদ্ধার করে আনতে পারেন। এক সময় উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত এক আধিকারিক জানান, শিলিগুড়ির জন্য বছর চারেক আগেই একটি ‘স্কাই লিফট’ কেনা হয়েছিল। কিন্তু সেটি কলকাতায় ব্যবহার করা হচ্ছে । কবে এই ধরণের পরিকাঠামো শহরে পৌঁছবে সেদিকেই এখন তাকিয়ে শহরের দমকলকর্মী ও আধিকারিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy