উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লককৃষি অধিকর্তাকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের চেক বিলির কাজ বন্ধ করে দিল সংশ্লিষ্ট দফতর। প্রতিবাদে ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েতের ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বিক্ষোভ দেখান।
সোমবার হেমতাবাদ ব্লক তৃণমূলের নেতৃত্বে চৈনগর, বিষ্ণুপুর, নওদা, বাঙালবাড়ি ও হেমতাবাদ পঞ্চায়েতের পাঁচ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষি হেমতাবাদের থানামোড় থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। প্রায় একঘণ্টা ব্লক অফিস ঘেরাও করেন তাঁরা। পরে অবশ্য পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিডিও প্রেমা শেরপা বলেন, ‘‘এই বিষয়ে যা বলার কৃষি দফতর বলবে।’’
রায়গঞ্জ মহকুমা কৃষি আধিকারিক অনুপম তরফদারের দাবি, ‘‘নিরাপত্তার অভাববোধের কারণ দেখিয়ে হেমতাবাদের ব্লককৃষি অধিকর্তা শ্রীকান্ত সিংহ গত শনিবার বদলির আবেদন জানিয়ে দু’সপ্তাহের ছুটিতে চলে গিয়েছেন। বর্তমানে ব্লককৃষি অধিকর্তার দায়িত্বে কেউ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে চেক বিলির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের চেক বিলির কাজ চলছিল। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দফতরে চড়াও হয়ে শ্রীকান্তবাবুকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় দত্ত, ব্লকের দুই কার্যকরী সভাপতি নারায়ণ দাস ও জাকির হোসেন, তৃণমূল কিষান ক্ষেতমজুর সংগঠনের হেমতাবাদ ব্লক সম্পাদক রফিক সরকার ও আইএনটিটিইউসির হেমতাবাদ ব্লক সম্পাদক আসরাফুল আলির বিরুদ্ধে। শ্রীকান্তবাবু গত ১৫ মে জেলা পুলিশ সুপারের সৈয়দ ওয়াকার রেজার কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওইদিনই হেমতাবাদ ব্লক মহিলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদিকা সফেরা খাতুন এবং ওই সংগঠনের হেমতাবাদ ব্লক কমিটির সদস্যা জোহরা খাতুন, মৃত্যুঞ্জয়বাবু কৃষিকর্তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ দু’পক্ষের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় দেড় মাস আগে হেমতাবাদের পাঁচটি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ভুট্টাচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন কৃষি দফতরের কর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করে রাজ্য কৃষি দফতরে একটি রিপোর্ট পাঠান। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সম্প্রতি রাজ্য কৃষি দফতর ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ওই দিন ব্লকের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ২০০ জন চাষিকে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার চেক বিলি করার কথা ছিল শ্রীকান্তবাবুর। কিন্তু ১০ জন চাষির হাতে চেক তুলে দিতেই গোলমাল বাধে।
হেমতাবাদ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘শ্রীকান্তবাবু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের অন্ধকারে রেখে নিজের পছন্দের কিছু চাষিকে লেনদেনের শর্তে ক্ষতিপূরণের চেক পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অবিলম্বে কৃষি দফতর নতুন করে সমীক্ষা করে পাঁচটি পঞ্চায়েতের সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাষিদের নিয়ে কৃষি দফতর ঘেরাও করা হবে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ ব্যপারে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে শ্রীকান্তবাবু বলেন, ‘‘আমি বদলির আবেদন করে ছুটিতে রয়েছি। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’ জেলা উপকৃষি অধিকর্তা শাশ্বতকমল রায় বলেন, ‘‘চাষিদের অভিযোগ শুনেছি। খুব শীঘ্রই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy