তাঁবুর ‘ঘরে’ চিত্তা। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা পেরিয়ে গ্রামে ঢুকতেই নজরে পড়ে টিন দিয়ে তাঁবুর মতো একটি আস্তানা। সেখানেই কোনও ভাবে মাথা গোঁজার আশ্রয় করেছেন আশি ছুঁই-ছুঁই আদিবাসী বৃদ্ধা চিত্তা মুর্মু। তিনি একা নন, মেয়ে মারা যাওয়ায় তাঁর সঙ্গেই থাকে নাতি, নাতনিও। কিছু দিন আগে অসুখে মারা গিয়েছে একমাত্র রোজগেরে ছেলে। চেয়েচিন্তে যা মেলে তা দিয়েই একবেলা খাবারটুকু জোটে।
রাজ্য জুড়ে সর্বত্র যখন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চলছে তখন ইসলামপুর থানার পন্ডিতপোতা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীবাড়ি সংসদের সমস্ত সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত ওই বৃদ্ধা। মেলেনি বার্ধক্যভাতা পর্যন্ত। যদিও সব শুনে মহকুমাশাসক সপ্তর্ষি নাগ বুধবার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনকে বলা হবে দেখার জন্য। উনি অবশ্যই সাহায্য পাবেন।’’
এক সময় ওই বৃদ্ধার আয় বলতে ছিল ছেলের ভিক্ষাবৃত্তি। করোনা আবহে লকডাউনের সময় সেই ভিক্ষাটুকুও মেলেনি ঠিক মতো। শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় পরের দিকে ছেলে কাজে বেরতে পারতেন না। বিষয়টি জানাজানি হতে পন্ডিতপোতা ২ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কিছুটা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়িতে। কিন্তু সরকারি ভাবে কোনও সুবিধাই তাঁরা পাননি বলে দাবি ওই বৃদ্ধার। মাস খানেক আগে ছেলে রবি হেমব্রম মারা যান। চিত্তা বলেন, ‘‘ভোট দেওয়ার জন্য পরিচয়পত্রটুকু ছাড়া আমার কিছুই নেই। আশপাশে থেকে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিয়েই চলে আমাদের।’’
বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ওই সংসদের বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জয় কীর্তনীয়া। তিনি বলেন, ‘‘একসময় একটি ত্রিপল দিয়েছিলাম। তা দিয়ে ঘর করে থাকতেন ওঁরা। ছেলে যখন বেঁচে ছিল তখন টাকা-পয়সা, ওষুধ দিয়ে সাহায্য করেছি। লকডাউনের সময় চাল, আলু, সোয়াবিন দিয়েছিলাম। এখনও মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিই। ব্লক প্রশাসন ও প্রধানকেও বলেছি ওদের বিষয়ে।’’ সঞ্জয় জানান, ওই গ্রামে প্রায় ১২টি এমন হতদরিদ্র পরিবার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেক বয়স্ক মানুষেরই বার্ধক্যভাতা মেলেনি, দাবি সঞ্জয়ের।
এ ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান রাজি বেগম বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় এমন পরিবারদের আর্থিক সঙ্কটের কথা জানতে পেরে সাহায্য করা হয়েছিল। এখন কি পরিস্থিতি সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy