Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

হাজার বছরের গড়ের মাটি কেটে হয়েছে রাস্তা

 প্রায় হাজার বছর আগে মাটি দিয়ে দুর্গ তৈরি করেছিলেন রাজা। কোচবিহারের গোসানিমারিতে যার প্রচলিত নাম গড়। অবাধে তারই মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

এ ভাবেই যথেচ্ছ মাটি কাটায় দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রাচীন দুর্গ। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই যথেচ্ছ মাটি কাটায় দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রাচীন দুর্গ। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৬
Share: Save:

প্রায় হাজার বছর আগে মাটি দিয়ে দুর্গ তৈরি করেছিলেন রাজা। কোচবিহারের গোসানিমারিতে যার প্রচলিত নাম গড়। অবাধে তারই মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অথচ গোসানিমারির কাছাকাছি গ্রামে তল্লাশি করে পুরাতত্ত্ববিদেরা গত দিন দু’য়েকে বেশ কিছু প্রায় হাজার বছরের পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শনের খোঁজ পেয়েছেন। গোসানিমারির কাছেই রাজপাট থেকে মিলেছে প্রায় হাজার বছরের পুরনো মাটির দেওয়াল। একাদশ-দ্বাদশ শতকের ভাস্কর্য।

ইতিহাসবিদরা অনুমান করেন, এই এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে পুরাণ ও ইতিহাসের বিখ্যাত কামরূপের। কখনও তা কামরূপেরই অন্তর্গত ছিল। আবার কখনও স্বতন্ত্র রাজত্বও ছিল। কিন্তু সেই স্বাধীন রাজারাও কামরূপের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন। যেমন, এই এলাকায় এক সময় রাজত্ব করতেন খেনরা। পঞ্চদশ শতকে তাঁদের এক রাজা নীলাম্বর কিন্তু কামতেশ্বর উপাধি পর্যন্ত নিয়েছিলেন। ওই শতকেরই শেষ দিকে গৌড়ের রাজা হুসেন সাহ এই এলাকা দখল করেন। কিন্তু কিছু দশকের মধ্যেই খেন রাজাদের স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষের উপরে কোচ রাজারা নতুন নির্মাণ গড়ে তোলেন। তা ছাড়া উপায়ও ছিল না। সব সময়েই কামরূপের সীমান্ত বলে এই এলাকা গুরুত্ব পেত। এখানকার গড় শক্তপোক্ত ভাবেই তৈরি করতে হত।

ইতিহাসবিদদের আশঙ্কা, সেই গড়ের মাটি কাটার জন্য যেমন এক দিকে গড় দুর্বল হচ্ছে, তেমনই মাটির নীচে থাকা কোনও প্রত্নবস্তুও বেহাত হয়ে যেতে পারে। তার পরেও ওই গড়ের মাটি কেটে তা শীতলখুচি এলাকায় রাস্তার কাজে লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

শুধু তাই নয়, তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনই সেই কাজে জড়িত, এমন অভিযোগও উঠেছে। কোচবিহারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া অবশ্য বলেন, “শুনেছি স্থানীয় কয়েকজন ওই মাটি ব্যক্তিগত কাজে কাটছিল। রাস্তার কাজে লাগানো হয়েছে কি না, তার খোঁজ নিচ্ছি।’’

কোচবিহারের চারটি বিধানসভা এলাকা কোচবিহার দক্ষিণ, দিনহাটা, সিতাই এবং শীতলখুচি বিধানসভা এলাকার মোট ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ওই গড় রয়েছে। তবু কোনও রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক নজরদারি নেই কেন? জেলা পরিষদ জানিয়েছে, বোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করা হবে। কথা বলা হয়েছে বিডিওদের সঙ্গেও। মাথাভাঙার বিধায়ক হিতেন বর্মনেরও দাবি, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন আর মাটি কাটা হচ্ছে না।’’

তবে গোসানিমারি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক শিক্ষক প্রদীপ ঝা বলেন, অনেক দেরি এমনিতেই হয়ে গিয়েছে। কত ঐতিহাসিক নিদর্শন নষ্ট হয়েছে, তার হিসেবও নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Castle History Ancient Historians
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE