সমাজের স্বার্থে জাল টাকার কারবারীদের সব সময় দেশের আইনের সর্বোচ্চ এবং চূড়ান্ত সাজা হওয়া দরকার বলে এজলাসে মন্তব্য করলেন বিচারক। মঙ্গলবার দুপুরে একটি জাল টাকার মামলায় অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে, শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (ফাস্ট কোর্ট) বিচারক অজয় কুমার দাস ওই কথা বলেছেন।
আদালত সূত্রের খবর, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১০ লক্ষ জাল টাকা- সহ বিহারের দুই বাসিন্দাকে শিলিগুড়িতে থেকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের (ডিআরআই) অফিসারেরা। অন্যতম এক অভিযুক্ত মহিলা মামলা চলাকালীন মারা যান। রাম প্রবেশ শাহ নামের অভিযুক্তকে এ দিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক।
বিচারক রায় ঘোষণার সময় জানান, এই ধরণের অপরাধের জেরে দেশের অর্থনীতি তো বটেই দেশের সুরক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কেউ একই কাজ করার আগে দু’বার ভেবে নেয়। বিচারকের সাজা শোনার আগে অভিযুক্ত বিহারের চম্পারণ জেলার বাসিন্দা রামপ্রবেশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসাবে জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।
তবে সরকারি আইনজীবী পীযূষকান্তি ঘোষ এবং সুস্মিতা বসু কড়া শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেন। পীযূষবাবু বলেন, ‘‘কোনওভাবেই এঁদের ক্ষমা বা কম সাজা হওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। এই ধরণের চক্র সমাজের ভিত নড়িয়ে দিচ্ছে। মামলার এই রায় দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’’
রায়ের পর অবশ্য অভিযুক্তের আইনজীবী উদয় শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করছি। তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষীর বয়ানে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে।’’
২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুপুর বেলায় বিহারের মোতিহারের বাসে ওঠার সময় রামপ্রবেশ শাহ এবং আশা শাহ’কে গ্রেফতার করেন ডিআরআই অফিসাররা। তাদের হেফাজতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে ৯ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা মেলে। ৭৯৮টি জাল ৫০০ টাকা এবং ৫৯৯টি জাল ১ হাজার টাকার নোট ছিল।
ডিআরআই ছাড়াও তদন্তে নামে প্রধাননগর থানা এবং পরে কমিশনারেটের গোয়েন্দা শাখা। ধৃতদের আরও দুই সঙ্গীর খোঁজে বিহারের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়।
যদিও গত চার বছরেও তাদের হদিশ মেলেনি। অভিযুক্ত আশাদেবী শিলিগুড়ি সংশোধনাগারে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে মারা যান। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, দিল্লি এবং শ্রীনগরের পুজাহা থানা এলাকায় চক্রের কিংপিনরা বসে রয়েছে। সেখান থেকে জাল নোটের কারবারীরা গোটা দেশে সক্রিয় রয়েছে। দু’দফায় পুলিশ দিল্লি, শ্রীনগরেও যায়।
সেখান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে কালিয়াচক হয়ে জাল টাকা এপারে আসছে। অভিযুক্ত রামপ্রবেশের মত দিনমজুরদের কমিশনের টোপ দিয়ে টাকা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওই বিপুল পরিমাণ জাল টাকা মালদহ থেকে বিহারের মতিহারে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy