চাঁচলে ফুটিফাটা পাটখেত।
জমিতে চারবার বীজ বুনেছিলেন পাটচাষি রেজাউল করিম। চারবার বীজ ও সেচ মিলিয়ে তার খরচ হয়ে গিয়েছে ছ’ হাজার টাকা। কিন্তু গাছের দেখা মেলেনি। বীজ অঙ্কুরিত হতেই প্রতিবার তা জমিতেই শুকিয়ে গিয়েছে। তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বৃষ্টি হলে আরও একবার বীজ বুনে চেষ্টা করে দেখবেন, সেই আশায়।
আব্দুল মালেকের জমিতে অগোছালোভাবে কিছু পাট গাছের দেখা মিলেছিল। কিন্তু গরমে তা আর বাড়েনি। বরং চারাগুলোও ঝলসে গিয়েছে। রেজাউল করিম ও আব্দুল মালেক মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পারো এলাকার চাষি। শুধু ওই দুই চাষি নন, তাদের মতোই পাটচাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালদহের চাঁচল মহকুমার ছ’টি ব্লকের পাটচাষিরা। বৃষ্টি না হওয়ার পাশাপাশি দাবদাহে এভাবেই কোথাও অঙ্কুরেই বিনাশ হচ্ছে পাটগাছ আবার কোথাও গাছ হলেও পাতা ঝলসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি পাটচাষ হয় চাঁচল মহকুমায়। চাষ শুরু হলেও ছিটেফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই এখনও। ফলে মহকুমার অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটচাষ মার খেতে বসায় চাষিদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন কৃষিদফতরও। এরমধ্যে পাটচাষে কতটা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তার হিসেব করা হচ্ছে বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের শস্যরক্ষা আধিকারিক তমাল সরকার বলেন, ‘‘বৃষ্টির অভাবেই পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ’’
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, চাঁচল মহকুমার ৬টি ব্লকে ৫৭ হাজার চাষযোগ্য জমির মধ্যে ২১ হাজার হেক্টরে পাটচাষ হয়। পুজোর আগে পাট ওঠায়, কেনাকাটা থেকে শুরু করে অন্যান্য চাষবাসও নির্ভর করে পাট চাষের লাভ-ক্ষতির উপরে। কিন্তু এ বছর অনাবৃষ্টির পাশাপাশি প্রচন্ড দাবদাহে মাঠ আগে থেকেই শুকিয়ে ফুটিফাটা। জমিতে জলসেচ করে তবু পাট বুনেছিলেন চাষিরা, আশা ছিল বৃষ্টি হবে। কিন্তু তারপরেও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে রোদের তাপে কোথাও বীজ বোনার পরেও গাছের দেখা মেলেনি, কোথাও গাছ হলেও তা ঝলসে গিয়েছে। এরই পাশাপাশি দোসর আবার শুঁয়োপোকার আক্রমণ।
বালুরঘাটের বড়মাইলেও একই অবস্থা। শুকিয়ে গিয়েছে পুকুর।—নিজস্ব চিত্র।
কৃষি দফতরের অবশ্য পরামর্শ, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বিকেলের দিকে ইউরিয়া সার জলে মিশিয়ে পাটগাছে স্প্রে করলে ফল মিলবে। আর শুঁয়োপোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিম তেল গুলে স্প্রে করতে হবে। কিন্তু হাজার হাজার বিঘে জমিতে একই সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্প্রে করে ফসল বাঁচানো যে কার্যত অসম্ভব সেটা চাষিদের পাশাপাশি অস্বীকার করেননি কৃষি দফতরের কর্তারাও। ফলে ভরসা বৃষ্টি।
কৃষি দফতরের চাঁচল-২ ব্লকের সহ-অধিকর্তা দেবাশিস ঘোষও বলেন, ‘‘রোদের জন্য গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। পাতাও ঝলসে যাচ্ছে। আবার গরমেই শুঁয়োপোকা উপদ্রব হয়। যা চাষিদের কাছে বাড়তি উপদ্রব।’’
চাষিরা জানান, পাটখেতে সচরাচর কেউ জলসেচ করেন না। বৃষ্টির জলের উপর ভরসা করেই চাষিরা পাটচাষ করে থাকেন। কিন্তু এবার গাছ বাঁচাতে গিয়ে সেচের জন্য বাড়তি খরচ করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কেননা জলস্তর কমে যাওয়ায় শ্যালো পাম্পসেটেও ঠিকভাবে জল উঠছে না। আগে এক ঘণ্টায় যেটুকু সেচের জল মিলত এখন তার জন্য দু’ঘণ্টা শ্যালো চালাতে হচ্ছে। এই অবস্থায় এবার পাটচাষের কি হবে সেই দুশ্চিন্তায় চাষিদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে।
পাটচাষি রেজাউল করিম, আব্দুল মালেকরা বলেন, ‘‘কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গাছের দেখা মেলেনি। শ্যালোতে জল কম ওঠায় খরচও দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া সবার শ্যালো নেই। জলসেচের টাকা দিতে না পারায় শ্যালোর মালিকরাও জল দিতে চাইছেন না। যা অবস্থা তাতে এবার আমাদের পথে বসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy