কমলি সরেন। —নিজস্ব চিত্র।
গাজলের তুড়ি মোড়। সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলেই কোটালহাটি গ্রাম। গ্রামের আশেপাশে যাকেই জিজ্ঞাসা করা হয়, কমলি সোরেনকে চেনেন, চিন্তায় পড়ে যান। তার পরে হয়তো জানতে চাইলেন, ‘গুরুমা’কে চেনেন? সঙ্গে উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখ। দেখিয়ে দিলেন গ্রামের কোন রাস্তায় গেলে মিলবে তাঁর বাড়ি।
প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে তাঁর টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের বাইরে মেলা লোক। সকলেই জেনে গিয়েছে, পদ্ম সম্মান পেয়েছেন গুরুমা কমলি সোরেন। শীতের সকালে গায়ে জড়ানো চাদর, কপালে তিলক, কমলি এগিয়ে এসে নমস্কার জানালেন সকলকে। সামনে তুলসীমঞ্চে জ্বেলে দিলেন ধূপ। তার পরে বসলেন কথা বলতে।
সম্প্রতি পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রত্যন্ত গ্রামের অপরিচিত মানুষদের সামনে নিয়ে আসছে। সেই ভাবেই কি কমলি পুরস্কার পেলেন? স্থানীয় বিজেপি নেত্রী সাগরিকা সরকার বলেন, ‘‘দলের তরফে গুরুমার পরিচয়, ফোন নম্বর চাওয়া হয়। তখন বুঝিনি, কেন।’’ সোমবার রাতে পদ্ম সম্মানপ্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কমলি সোরেনের উঠোনে ভিড়। আর সেখানে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সংখ্যাই বেশি। ফুল, কম্বল, মিষ্টি দিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়ে যান গাজল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান বিন্দু পুঝোর মাল। পরে তাঁর বাড়ি ঘুরে যান সাগরিকা।
কী করে গুরুমা হয়ে উঠলেন কমলি? কী তাঁর কাজের লক্ষ্য? কমলি বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর কোটালহাটি গ্রামে ত্রিপলের ছাউনিতে থাকতে শুরু করি। আমার স্বামী ধর্মচর্চা করতেন। আমিও গ্রামে দীক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করি।’’ এখন শিষ্যের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। আরএসএসের সুরে তিনি বলেন, “আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। তাঁদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”
কমলি বলেন, তিনি রাজনীতিতে যুক্ত নন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরএসএসের শাখা বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত কমলি। সঙ্ঘ সূত্রে খবর, আদিবাসীদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার কাজ করে এই আশ্রম। এ বারের পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে কোটালহাটি গ্রামে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৩১৩টি ভোটের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৭৫০টি। লোকসভা নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও বেশি। বিজেপির সাফল্যের নৈপথ্যে বনবাসী কল্যাণ আশ্রম রয়েছে বলে মত গেরুয়া শিবিরেরই। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠতার জন্যই কি মিলল পদ্মশ্রী সম্মান? এই প্রশ্ন উঠছে বিরোধীদের মধ্যে থেকেই। তবে কমলি বলেন, “শিষ্যদের কাছে গিয়ে কখনও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয় না। আর আমি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তও না।’’ তাঁর কথায়, ভিক্ষাবৃত্তি এবং শিষ্যদের দানেই দিন চলে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘পুরস্কারের তালিকায় আমার নাম কী ভাবে উঠল, জানি না।’’
মঙ্গলবার সকাল থেকেই কমলির বাড়িতে বিজেপির নেতা-নেত্রীদের যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। ফুল, কম্বল, মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধনা দেন গাজল-১ গ্রামপঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান বিন্দু পুজোর মাল। পরে গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা দেন বিজেপি নেত্রী সাগরিকা সরকারেরা। সাগরিকা বলেন, “দলের তরফে গুরুমার পরিচয়, ফোন নম্বর চাওয়া হয়েছিল। তখন বুঝতে পারলেও এখন তা স্পষ্ট হল।” পদ্মশ্রী সম্মান ভোটের চমক বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করার ফল পেয়েছেন কমলি। এখানে রাজনীতির বিষয় নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy