—ফাইল চিত্র।
চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে মালিকদের কড়া বার্তা দিল শ্রম দফতর। দফতরের নির্দেশিকার পরও অনেক বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক ১৭৬ টাকা মজুরি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছিল। শ্রম দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, বিভাগীয় তদন্তে সেই অভিযোগের সত্যতা জানা গিয়েছে। তারপরেই তরাই ও ডুয়ার্সের ৩৫টি চা বাগান কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেন যুগ্ম শ্রম কমিশনার (উত্তরবঙ্গ) চন্দন দাশগুপ্ত।
বৃহস্পতিবার ওই বাগান কর্তৃপক্ষদের শিলিগুড়িতে নিজের দফতরে ডেকে শুনানি করেন তিনি। মালিক পক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘শুনানির পর অনেক বাগান কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হারে মজুরি দিতে সম্মত হয়েছেন। কেউ কেউ আর্থিক সমস্যার কথা বলেছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাব। সেখান থেকে যেভাবে নির্দেশ আসবে সে ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট রাজ্যের শ্রম কমিশনার নির্দেশিকা জারি করে ১৭৬ টাকা করে মজুরি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। যার মধ্যে ১৬৭ টাকা মূল মজুরি এবং ৯ টাকা রেশনের অর্থ। সব বাগান নির্ধারিত হারে মজুরি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে শ্রম দফতরে লিখিত অভিযোগ জানায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শ্রমমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জমা পড়ে। রাজ্যের নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বাগান মালিকদের সংগঠন তেরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশেন (টিপা)। রেশনের অর্থকে মূল মজুরির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলে টিপা। সেই মামলায় জিতেও যায় মালিক সংগঠনটি। তারপরই মজুরি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। ১৭৬ টাকা মজুরি দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় বাগানগুলি। বেশিরভাগ বাগান ১৭৬ টাকা মজুরি দিলেও অনেক বাগানই তা দিতে অস্বীকার করে। আদালতের রায়ের পর বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে টিপা-র কাছে অনুরোধ করা হয় তারা যেন শ্রমিকদের স্বার্থে ১৭৬ টাকা দৈনিক মজুরি দেন। টিপা-র সচিব মলয় কুমার মৈত্র বলেন, ‘‘আমরা চা শিল্পের স্বার্থে শ্রমিক সংগঠনগুলির অনুরোধ মেনে নিয়েছি। আমাদের সদস্য বাগানগুলি নিয়মিত ১৭৬ টাকা করেই দৈনিক মজুরি দিচ্ছে।’’
শ্রম দফতরের উদ্যোগে খুশি শ্রমিক সংগঠনগুলি। ২৯টি চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের নেতা অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও শ্রম দফতর তাদের কর্তব্য পালন শুরু করায় আমরা খুশি। অনেক বাগানই এখনও ১৭৬ টাকা মজুরি দিচ্ছে না। শ্রমিকদের স্বার্থে তাদেরও সরকারি নির্দেশিকা মেনে নেওয়া উচিত।’’ টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সদস্য সংগঠনগুলি সরকারি নির্দেশ মেনেই মজুরি দিচ্ছে। আমরা মনে করি সরকারি নির্দেশ সকলের মেনে চলা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy