Advertisement
০১ মে ২০২৪

পরিদর্শক আসার আগে ভোলবদল মেডিক্যালে

ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল! মঙ্গলবার ‘হযবরল’-র কথাই মনে পড়ছিল মালদহ মেডিক্যালে আসা রোগীর পরিজনদের।হঠাৎ চালু হল নতুন ওয়ার্ড। গোটা হাসপাতাল চত্বর একেবারে ঝাঁ চকচকে। ছড়ানো হয়েছে ব্লিচিং। প্রতিদিন ওয়ার্ডগুলিতে রোগীদের বেডেই পরিজনদের ভিড় থিকথিক করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে সেই চিত্র আর নেই।

মালদহ মেডিক্যালে পরিদর্শনে এমসিআই। নিজস্ব চিত্র

মালদহ মেডিক্যালে পরিদর্শনে এমসিআই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল! মঙ্গলবার ‘হযবরল’-র কথাই মনে পড়ছিল মালদহ মেডিক্যালে আসা রোগীর পরিজনদের।

হঠাৎ চালু হল নতুন ওয়ার্ড। গোটা হাসপাতাল চত্বর একেবারে ঝাঁ চকচকে। ছড়ানো হয়েছে ব্লিচিং। প্রতিদিন ওয়ার্ডগুলিতে রোগীদের বেডেই পরিজনদের ভিড় থিকথিক করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে সেই চিত্র আর নেই। সেই পরিজনদের ভিড় চলে গিয়েছে হাসপাতালের বাইরে। অন্যদিন একাধিক ওয়ার্ডে কুকুরদের ঘোরাফেরা করার অভিযোগ থাকলেও এ দিন তাদেরও দেখা নেই!

শুধু কী তাই, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে এ দিন যেন ‘চাঁদের হাট’! কোন বিভাগের ডাক্তারবাবু নেই সেখানে! এতদিন গলায় শুধু স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে যাঁদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা করতে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলবার তাঁদের পরনে ছিল সাদা অ্যাপ্রন। সবকিছু দেখে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী তাঁদের পরিজনেরা রীতিমতো অবাক! আচমকা এই ভোলবদল কীসের জাদুতে? উত্তর মিলল খানিক খোঁজ নিতেই। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) পরিদর্শন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই এমসিআইয়ের তিন সদস্য পি সৌন্দররাজন, রাকেশ মাহেশ্বরী ও টি কে দাস মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করেন। তাই তাঁদের সামনে যাতে বিতর্কে না পড়তে হয় তাই এমনই ‘প্রস্তুতি’ নিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একজন ছাড়া কোনও রোগীর পরিজনদের এ দিন ওয়ার্ডে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কয়েকমাস আগে এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এমসিআইয়ের প্রতিনিধিরা ওয়ার্ডগুলির পরিকাঠামোর বেহাল পরিস্থিতি দেখে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। পরিজনদের ভিড় নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও খামতির কথা জানান।

এ সব মাথায় রেখেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করেন। পরিদর্শনের একদিন আগেই সোমবার থেকে মেল মেডিক্যাল ৩ নামে ৩০ বেডের একটি ওয়ার্ড তড়িঘড়ি চালু করে দেওয়া হয়। তিনতলায় চালু করা ওই ওয়ার্ডটিতে এর আগে শিশু বিভাগ ছিল। কয়েকমাস আগে সেই শিশু বিভাগটি স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায় ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের ওপরে দোতলায়। সদ্য চালু মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডটিতে জনা ২০ রোগী এ দিন ছিলেন। পুরো ওয়ার্ড ছিল সাফসুতরো। এমসিআইয়ের পরিদর্শনের জন্য তড়িঘড়ি এই ওয়ার্ড চালু বলে অবশ্য মানতে নারাজ হাসপাতাল সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘মেল মেডিক্যাল ১ ও ২ দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। সেগুলিতে চাপ কমাতেই এটা চালু করা হয়েছে।’’

এ দিন পরিদর্শকেরা ব্লাড সেপারেশন কম্পোনেন্ট ইউনিটটি তালাবন্ধ দেখে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহ প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মেডিক্যাল অফিসার সকলেরই সঙ্গে পালা করে কথা বলেন। পরিদর্শন দলের নেতৃত্বে থাকা পি সৌন্দররাজন বলেন, ‘‘এমসিআইতে রিপোর্ট জানাব।’’ তবে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি উপস্থিত রোগীদের পরিজনেরা। একজনের মন্তব্য, ‘‘এই হাসপাতালে এত চিকিৎসক থাকলেও তাঁদের তো রোজ দেখা মেলে না! তাঁরা রোজ এলে পরিষেবা আরও ভালো মিলত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MCI Malda Medical College and Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE