ব্যস্ত পরেশ অধিকারী। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
টের পরেও ব্যস্ততার শেষ নেই। সেই সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুরু যে করছেন, শেষই হচ্ছে না। একবার বসছেন তো আরেকবার উঠছেন। ফোনের পর ফোন বেজে চলেছে। একের পর এক লোক আসছেন। কথা চলছেই। তার মধ্যেই স্নান, খাওয়া সেরে দুধ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। সোজা দলীয় অফিস।
সেখানে তখন অনেক লোক ভিড় করে ফেলেছে। ‘কী রে জয়নাল খবর কী?’ জয়নাল হেসে ফেললেন। ‘কত লিড আসবে’। উত্তর এল, “দাদা মোর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কমপক্ষে দু’হাজার।”
মেখলিগঞ্জের বাম গণতান্ত্রিক জোট তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী পরেশ অধিকারীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। বললেন, “এত লাগবে না। এক হাজার হলেই তো অনেক।” তারপর দলীয় কর্মীদের নিয়ে আবার বৈঠক।
এখনও এত ব্যস্ততা? পরেশবাবু জানালেন, চোখের সমস্যায় চিকিৎসক দেখাতে চার দিন কলকাতায় ছিলেন। সেখানেও মিটিংয়ে যোগ দিয়েছেন। অবশ্য কারও ফোনও ধরতে ভুল করেননি। তার মধ্যেই নানা রিপোর্ট গিয়েছে তাঁর কানে। বিচলিত হননি। তিনি বললেন, “কবে যে ১৯ মে আসবে, সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি। চাপ আমার কিছু নেই। যা হবে তা অন্ততপক্ষে এই বিধানসভার সবাই জেনে গিয়েছে। কিন্তু সময়টার জন্য অপেক্ষা আছে।”
বাম জমানায় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন পরেশবাবু। টানা পাঁচ বছর ওই দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়ের কথা দিন তারিখ ধরে ধরে মনে আছে। তাঁর কথায়, দফতর নিয়ে তখন তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। গরিব মানুষের চাওয়া-পাওয়া সব বুঝে কাজ শুরু করেছিলেন। রেশন কার্ড নিয়ে মানুষের সমস্যার প্রায় সমাধান করে ফেলেছিলেন। গরিব মানুষের কাছে সহজে নানা সুবিধে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি নানা কাজে হাত দিয়েছিলেন।
তিনি জানান, প্রথম মন্ত্রী হয়েই তাঁর লক্ষ্য ছিল রেশন কার্ড ব্যবস্থার সরলীকরণ। তা করার পরে ২০০৮ সালে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া শুরু করেন। আড়াই কোটির উপরে মানুষ সেই সুবিধে পান। রেশন থেকেই তখন চাল, ময়দা, চিনি, সরষের তেল, কেরোসিন তেল কি না দেওয়া হত। বাজার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা নিত দফতর। কোনও জিনিসের দাম বাড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হত। ঈদ, পুজোর মরসুমে অতিরিক্ত সুবিধে দেওয়া হত। একদম গরিব মানুষ বা যারা চলতে ফিরতে পারতেন না তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে চাল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কৃষকরা যাতে লোকসানের মধ্যে না পড়ে সে জন্য সরকার ধান কিনে নিত। দলীয় অফিসে বসে কর্মীদের নিয়ে সে গল্পেই মেতে উঠছিলেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, গত পাঁচ বছরে চিত্র বদলে গিয়েছে।
রেশনে সামগ্রী নেই। বকেয়ার স্লিপ ধরানো হচ্ছে। ডিজিটাল কার্ড সবাই পায়নি। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আর্থিক ভাবে শক্ত সমর্থ। অথচ গরিব মানুষ পাননি। চিনি, সরষের তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনও ভূমিকাই নিচ্ছে না। ধান কেনার কথা বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, “পাঁচ বছর ধরে তো এ সব দেখছি। স্বাভাবিক ভাবেই কষ্ট হয়। মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চালের কথা বলা হচ্ছে। অথচ দুই টাকা কোত্থেকে আসবে, তা বলা হচ্ছে না।”
পার্টি অফিসে তখন ভিড় জমে গিয়েছে। সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্রসঙ্গ পালটে পরেশবাবু জানালেন, আর ছ’দিন রয়েছে গণনার। তার মধ্যে অনেক চাপ তাঁর। সব অঞ্চলে গিয়ে একবার করে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সবার সঙ্গে। কারা কারা গণনায় এজেন্ট থাকবেন, তাঁদের তালিকাও তৈরি করতে হবে। ওই তালিকা ধরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পরেশবাবুরই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বললেন, “আসলে আর তো মন মানছে না। যতটা ব্যস্ত থাকা যায় ততই ভাল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy