স্কুল বন্ধ। ফাঁকা ক্লাসে খেলছে খুদেরা। — নিজস্ব চিত্র
স্কুলের মাঠে মঞ্চ বেঁধে ক্লাস বন্ধ করে মাইক বাজিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানকে ঘিরে বির্তক দেখা দিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ি লাগোয়া ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার ঘটনা। জয়কান্ত স্টেটপ্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ফোকোশ সিংহ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের খেলার মাঠে অনুষ্ঠান দু’টি হয়েছে। ডাবগ্রাম ২ পঞ্চায়েতে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত ঘোষণার অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব-সহ একাধিক সরকারি আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। ক্লাস বন্ধ করে সরকারি অনুষ্ঠানকে ঘিরে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, মাস খানেক পুজোর ছুটির পর দু’দিন আগেই স্কুল খুলেছে। এ দিন স্কুল খোলা রেখেই অনুষ্ঠান হল। রোল কল ছাড়া দিনভর ক্লাস হয়নি। সকাল থেকে দুপুর অবধি কচিকাঁচাদের স্কুলে বসিয়ে রাখা হয়। কয়েক জন পড়ুযাকে দিয়ে বেঞ্চ, জলের ড্রামও টানানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দু’টি স্কুলের মধ্যে প্রাথমিক স্কুল কতৃর্পক্ষের দাবি, পঞ্চায়েত থেকে চিঠি দিয়ে তাঁদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তবে আরেকটি স্কুলের দাবি, এ দিন সকালে মৌখিক ভাবে অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে তাদের বেঞ্চ নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরেই ছেলেমেয়েদের অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়।
যদিও অনুষ্ঠানের মধ্যে বিতর্কের কিছু নেই বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল খোলা রেখে অনুষ্ঠান করার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নির্মল বাংলা প্রকল্পটাই হচ্ছে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিজের বাড়ি-এলাকার পরিস্কার রাখা, শৌচালয় ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া ইত্যাদির ওপর। শিশুদের তো কম বয়স থেকেই এ সব জানাটা প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, স্কুলের বইয়ের বাইরেও চোখের সামনে এ সব অনুষ্ঠান, বক্তব্য দেখলে শিশুরা এখন থেকেই সচেতন হবে। অভিভাবকদেরও বোঝাতে পারবে।
ইস্টার্ন বাইপাসের আশিঘর মোড় থেকে এনজেপির দিকে এগোতেই জয়কান্ত প্রাথমিক স্কুল। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৩৫৭। স্কুলের বিরাট ফুটবল মাঠের আর এক পাশে মাধ্যমিক শিক্ষারকেন্দ্রটি। সেখানে পঞ্চম থেকে অষ্টমশ্রেণি অবধি ১৫০ পড়ুয়া। স্কুলঘর, ফুটপাথ, শৌচালয়, সীমানা-সহ একাধিক কাজ বিধায়ক তহবিলের টাকায় হয়েছে। এ দিন সেখানেই স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্মল পঞ্চায়েতের ঘোষণা হয়েছে। এই উপলক্ষে স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে মিছিলও হয়েছে। পরে শিক্ষিকারা অনুষ্ঠানে গানও করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৬ অক্টোবর স্কুল বন্ধ হয়েছিল। ২ নভেম্বর খুলেছে। দু’দিন ক্লাস হতেই ফের স্কুল প্রায় বন্ধই থাকল। অনুষ্ঠান স্কুল ছুটির পরে বা ছুটির দিনে করলে ক্লাস বন্ধ রাখতে হতো না।
প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক অদৈতানন্দ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তাই ক্লাস হয়নি।’’ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক প্রভাস সমাজদার আলাদাভাবে জানান, আমাদের লিখিত ভাবে কিছু বলা হয়নি। সকালে মৌখিক ভাবে বলা হয়।
সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার ৮০টি পঞ্চায়েতের এখনও অবধি ৮টি পঞ্চায়েতকে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ডাবগ্রাম ১ হয়ে গিয়েছে। আগামী দু’মাসে ফুলবাড়ি ১/২ হবে। জেলা প্রশাসনের তরফে নজরদারি চলবে। ঠিকঠাক নির্মল এলাকা থাকলে আগামী ৫ বছর ইউনিসেফ আর্থিক সাহায্য করবে। এ দিন কয়েকটি সুবজসাথী সাইকেল ও ৯৩ জনকে পাট্টাও অনুষ্ঠানে বিলি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রধান সুধা সিংহ চট্টোপাধ্যায় জানান, স্থানীয় মানুষকে নিয়েই এলাকা নির্মল হয়েছে। তাই অভিভাবক, ছেলেমেয়ে সবাইকে নিয়েই অনুষ্ঠান হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy