Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘কেউ অসুস্থ হলে সবার আগে ছুটত পার্থ’

এলাকায় আদৌ রাগী যুবক হিসেবে পরিচিতি ছিলেন না। ‘‘রাত-বিরেতে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে সবার আগে ছুটতেন পার্থ। সেই যুবকই পিকনিকে গিয়ে মারপিটের জেরে খুন হয় কী ভাবে!’’, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন পার্থের বন্ধু।

 নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্থের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্থের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

সংগ্রাম সিংহ রায় l
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১১
Share: Save:

এলাকায় আদৌ রাগী যুবক হিসেবে পরিচিতি ছিলেন না। ‘‘রাত-বিরেতে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে সবার আগে ছুটতেন পার্থ। সেই যুবকই পিকনিকে গিয়ে মারপিটের জেরে খুন হয় কী ভাবে!’’, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন পার্থের বন্ধু। শিলিগুড়ির সুভাষপল্লি লাগোয়া বাগরাকোটে পার্থর পাড়া যেন ঘটনা বিশ্বাসই করতে পারছে না।

পাড়া বলতে বাগরাকোটের বস্তি। অলিগলি পেরিয়ে ভিতরে গিয়ে যখন নিহত পার্থর দেহ পৌঁছল, তখন তিলধারণের জায়গা নেই এক চিলতে উঠোনে। পাশাপাশি তিরিশ চল্লিশ ঘর বাসিন্দারা সকলেই আত্মীয়ের মতো। ঘরের ছেলেকে শেষবার ছুঁতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তাঁরা। মা এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেত্রী পপিদেবী তখন মূর্ছা যাচ্ছেন। পার্থর চেয়ে বছর চারেকের ছোট বোন মৌসুমী দাদার দেহ ঢুকতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেন না ভিড়ের ঠেলায়। ছোট জায়গা জনতার চাপে ভেঙে পড়ার জোগাড়। তাই মিনিট পাঁচেক পরেই সরিয়ে নেওয়া হল মরদেহ। চিরতরে যখন বাড়ি থেকে দেহ বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, পিছনে তখন মা-মেয়েকে সামলাতে হিমশিম পড়শিরা।

পিকনিকে গিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়ে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া পার্থর মৃত্যুর খবর পেতেই সকাল থেকে তাঁদের বাড়িতে হাজির হন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি রঞ্জন সরকার। বিকেলে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। সকাল থেকেই শোকের আবহ বাড়িতে। মেয়রও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যান।

নিহত বাবা মাধববাবু পেশায় গাড়িচালক। শনিবার কাজে যাননি। সারাদিন পাড়াতেই ছিলেন। দুপুর ২টো নাগাদ খাওয়ার সময় পার হলেও ছেলে আসছে না দেখে ফোন করেন তাঁকে। তখনই পার্থের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা। ছেলে জানায়, সে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছে। সেখানেই খাওয়াদাওয়া চলছে। মাধববাবু জানতেন না। মা পপিদেবীকে জানিয়েই পিকনিকে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি যখন বাড়িতে বসে বিশ্রাম করছি, আমার ছেলেটাকে তখন একদল দুষ্কৃতী পিটিয়ে মারছে। কোনওভাবে যদি জানতে পারতাম, তাহলে প্রাণ দিয়ে হলেও ছেলেটাকে যদি বাঁচাতে পারতাম!’’ বন্ধু শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পার্থ নেই, ভাবতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ub
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE