অরুণ জেটলি।
তখন সবে সংসদে পা দিয়েছি। চার দিকে নামজাদা সব বরিষ্ঠ সাংসদেরা। তাঁদের দেখি, সংসদকক্ষে তাঁদের কথা শুনি, আর চেষ্টা করি নতুন কিছু শেখার। কারণ, আমি তো বিরোধী আসনে ছাত্রী মাত্র। সংসদের অধিবেশন সম্পর্কে, সেখানে কী ধরনের কথা বলা চলে, কী বলা চলে না— সে সব সম্পর্কে বিশেষ ধ্যানধারণা ছিল না। সেই সময়ে অরুণ জেটলির সঙ্গে আলাপ। কী ভাবে, সেটাও একটা মজার গল্প।
তখন কিছু দিন হল অধিবেশন শুরু হয়েছে। এক দিন আমি সংসদে বক্তব্য রাখলাম। আমার সহযোগী সাংসদ সৌগতদার (সৌগত রায়) কাছে অরুণ জানতে চান, মেয়েটি কে? পরে অধিবেশনের বাইরে ওঁর সঙ্গে দেখা হতেই ডাকলেন আমায়। নিজেই কথা বললেন। তখন তো উনি শুধু সাংসদ নন, মন্ত্রী এবং নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবু দেখলাম, আমার মতো নতুন সাংসদকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে কথা বললেন। ওঁর ব্যবহারে কখনও মনে হয়নি যে আমি বিরোধী শিবিরের লোক। আপন করে নিতে পারতেন সহজেই।
অসম্ভব ভাল বক্তা ছিলেন অরুণ। সংসদে কী ভাবে বিরোধীদের সামলাতে হয়, ওঁর কাছ থেকে শিখেছি। সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ওঁর সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ হয়েছিল। অর্থমন্ত্রীর পদ সামলানোর পাশাপাশি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের (সুপ্রিম কোর্ট) আইনজীবী ছিলেন তিনি। সেই কাজেও তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি ছিল।
যে পাঁচ বছর দিল্লিতে সাংসদ হিসেবে ছিলাম, উনি যেন অভিভাবকের মতো ছিলেন। তার পর কয়েক বার অল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। রাজনীতির বেশ কিছু দিক সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেন। তখনই ওঁর বাগ্মিতা দেখে অবাক হয়েছিলাম। কোনও বিষয়ে প্রয়োজন হলে আমাকে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
এর পর একবার চলচিত্র উৎসবে ওঁর দেখা হয়। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ হয়নি ওঁর সঙ্গে। ওঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে মন খারাপ হয়েছিল। দেখা করার ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে এতটাই ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে যে, সেই সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি।
এ দিন নাটকের মহড়া ছিল। তার মধ্যেই দুঃসংবাদ পাই। এত বড় মাপের একজন নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিল। ওঁর মৃত্যুতে সকলের সঙ্গে আমিও শোকাহত। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
(অর্পিতা বালুরঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy