ধৃতদের তোলা হচ্ছে আদালতে। —নিজস্ব চিত্র।
ফাটাপুকুরের ডাকাতি কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’ বিহারের কিষাণগঞ্জ এবং উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে অভিযান চালিয়ে ওই চার ডাকাতকে ধরে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ডাকাতির সময় ব্যবহার করা দুটি ছোট গাড়ি। রবিবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। বাকি একজনকে চোদ্দ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মহম্মদ রিয়াজুল, মহম্মদ সুলতান, মহম্মদ সরিফুদ্দিন এবং মহম্মদ সুলেমান। তাঁদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, শ্লীলতাহানি, বোমাবাজি, অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগে ৩৯৫, ৩৯৭, ৩৫৪ এবং ১২০ (বি) আইপিসি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
গত ২৭ জুন রাতে ফাটাপুকুর সংলগ্ন ধারাপাড়ায় বাসিন্দা সুধীররঞ্জন ধারা নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকে দুই রাউণ্ড গুলি চালিয়ে যথেচ্ছ বোমা ছুঁড়ে ২৫ লক্ষ টাকা এবং ৫০ ভরি সোনার অলঙ্কার লুঠ করে একদল ডাকাত চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “ঘটনার তদন্তে বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। সব দিক খতিয়ে দেখে শনিবার রাতে জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল বিহার এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশের সাহায্য নিয়ে ইসলামপুর ও কিষাণগঞ্জে তল্লাসি চালায়। সেখানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাসি চলছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতরা সংখ্যায় কতজন ছিল তা নিয়ে প্রথম দিকে বিতর্ক থাকলেও পরে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মনে হয়েছিল ১৯ জন ব্যবসায়ীর ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু ঘটনার তদন্তে ২০ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। অভিযুক্তরা প্রত্যেকে বিহার এবং উত্তর দিনাজপুর এলাকার বাসিন্দা।
এখানেই শেষ নয়। পুলিশের দাবি, ডাকাতির ঘণ্টার ‘মাস্টার মাইন্ডের’ নাম মিলেছে। সে উত্তর দিনাজপুর এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ছয় বছর আগে ফাটাপুকুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসায়ী সুধীররঞ্জন ধারার বাড়ির উপরে নজর রেখে সে ডাকাত দল ভাড়া করে এনে লুঠপাটের ষড়যন্ত্র ছকে। অধরা ওই মাস্টার মাইন্ডের খোঁজে এখন জেলা পুলিশের ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’ বিহারের কিষাণগঞ্জ এবং উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে তল্লাশি চালাচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার জানান, কোন একদিন আচমকা ডাকাতি হয়নি। ঘটনার সাত দিন আগে কয়েকজন দুষ্কৃতী বিহার এবং ইসলামপুর থেকে এসে ব্যবসায়ীর পরিবার, তাঁদের বাড়ি, যাতায়াতের ব্যবস্থা সহ যাবতীয় খবর নেয়। এর পরে গত ২৭ জুন বিকেল নাগাদ দুটি ভাড়া গাড়িতে ১৩ জন ডাকাত ফুলবাড়িতে নামে। বাসে আসে আরও সাতজন। সন্ধ্যা নাগাদ দলটি ফাটাপুকুরের দিকে রওনা দেয়। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাশে নেমে গাড়ি রেখে মুখে কালি মাখে। এর পরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে চড়াও হয়। দলের পাণ্ডার নাম তদন্তের কারণে পুলিশ সুপার এদিন জনাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ডাকাত দলটির পুরো বৃত্তান্ত মিলেছে। এই মুহূর্তে সব কিছু খুলে বলা সম্ভব নয়।”
এদিকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা বিহার এবং উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা। তাঁদের চারজন ধরা পড়েছে শোনার তৃণমূলের রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি অঞ্চল কমিটির সহ সভাপতি মনোরঞ্জন দাস বলেন, “এখন পুলিশ কি বলবে!” ডাকাতির ঘটনার পরে পুলিশ তাঁকে ধরে। পরদিন সকাল থেকে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পরে মনোরঞ্জনবাবুকে ছেড়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিনি বলেন, “আমাকে হেনস্থা করা হল। এর দায় কে নেবে!” যদিও ওই তৃণমূল নেতা জানান বিষয়টি নিয়ে দলনেত্রীকে কিছু জানাতে চান না। তিনি বলেন, “পুলিশ গোটা ঘটনার সামনে তুলে আনুক। এর পরে যা বলার বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy