Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

নিয়ম রক্ষায় প্রাণ বাঁচবে তো?

এ যেন এঁদো পুকুরে গিয়ে মন্ত্র পড়ে গঙ্গা আমন্ত্রণ! মন্ত্রপূত জলও মিলল, গঙ্গা নেমত্তনের নিয়ম রক্ষাও হল। বাইক থেকে স্কুটি আরোহী, তরুণী থেকে সিনিয়র সিটিজেন অনেকেরই মাথায় নানা রঙের টুপির মতো ছোট হেলমেট দেখা যাচ্ছে শিলিগুড়িতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

এ যেন এঁদো পুকুরে গিয়ে মন্ত্র পড়ে গঙ্গা আমন্ত্রণ! মন্ত্রপূত জলও মিলল, গঙ্গা নেমত্তনের নিয়ম রক্ষাও হল। বাইক থেকে স্কুটি আরোহী, তরুণী থেকে সিনিয়র সিটিজেন অনেকেরই মাথায় নানা রঙের টুপির মতো ছোট হেলমেট দেখা যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। মাথা রক্ষা করবে কী, হাত ফস্কে পড়ে গেলে হেলমেটটাই আস্ত থাকবে কি না সন্দেহ। প্রশ্ন করলে তাঁদের অনেকে একগাল হেসে বলছে, ‘‘হেলমেট পরাও হল, নিয়মও বাঁচল।’’

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে গত রবিবার থেকে শিলিগুড়িতে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল না দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে পুলিশ। হেলমেট না পরলে রাস্তার পাশে সরকারি পার্কিংয়েও বাইক রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। শহরের বিভিন্ন মোড়, এমনকী গলি রাস্তাতেও হেলমেট ছাড়া বাইক-স্কুটি আরোহীদের দেখলেই রে রে করে তেড়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে হেলমেটের এই নিয়মরক্ষার প্রবণতা। পাতলা প্লাস্টিক-ফাইবারের তৈরি হেলমেট পরে পুলিশের ‘ছোঁয়া’ এড়ানো যাচ্ছে, মিলছে পেট্রোলও। যদিও, পুলিশের শীর্ষ অফিসারদের একাংশ দাবি করলেন, এমন হেলমেট পড়ে আইন বাঁচানো যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী ‘কড়া’ হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, তা বিফলে যাচ্ছে।

নিয়ম বাঁচানোর ‘অস্ত্র’ ছড়িয়ে রয়েছে শহর জুড়ে। হিলকার্ট রোডের ধারে লোহার স্ট্যান্ডে হেলমেটের পসরা বসিয়েছেন বিক্রম ছেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘হেলমেটে আইএসআই মার্কা না থাকলে বিক্রি করা যাবে না— এমন কোনও বারণ নেই। সবার পক্ষে দামি হেলমেট কেনা সম্ভব হয় না। তাই আমাদের থেকে কেনে।’’ শহরের অনেকে ফুটপাতেই হেলমেট সাজিয়ে হকার স্ট্যান্ডের ছড়াছড়ি। সবই হালকা প্লাস্টিক বা ফাইবারের তৈরি হেলমেট বলে অভিযোগ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, নিয়মে কড়াকড়ি করে হাল্কা হেলমেট বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। তাতেই সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত হবে। পথ নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করা শিলিগুড়ি নাগরিক কমিটির সদস্য অমিত সরকার বলেন, ‘‘পুলিশকে শুধু নিয়ম জারি করলেই হবে না, তার উদ্দেশ্য যাতে সাধিত হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।’’

তবে নিয়মের ঠেলায় হেলমেট বিক্রি বেড়েছে প্রচুর। সেবক রোডের একটি গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানের মালিক মনজয় সাহা জানালেন, আগে যেখানে সাকুল্যে ৫-১০টি বিক্রি হতো, সেখানে এখন দিনে গড়ে ৬০টি হেলমেট বিক্রি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মোটর পার্টস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরিন্দর বনশল জানালেন, সরকার স্বীকৃত অর্থাৎ আইএসআই ছাপ দেওয়া হেলমেট ন্যূনতম ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু দেড়শো টাকা দিলেই মেলে নিয়মরক্ষার হেলমেট। সুরিন্দরবাবু বলেন, ‘‘ও সব হেলমেট পরলে নিরাপত্তা তো দূরের কথা, উল্টে হেলমেটের ভাঙা টুকরো মাথায় ঢুকে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘সব কিছুই আমাদের নজরে রয়েছে। সুরক্ষাই মূল কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ হবে।’’ শিলিগুড়ি পুলিশের একটি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, হেলমেটের নিয়মরক্ষার প্রবণতা রুখতে শীঘ্রই নিয়মে কিছু রদবদল ঘটানো হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Helmet Biker Senior citizen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE