মাটিতে মিশে গিয়েছে শশা গাছ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
উত্তরবঙ্গের দুই এলাকায় আবহাওয়ার দুই বিপরীত চিত্র। ময়নাগুড়িতে যখন ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে চাষে কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, চাঁচলে তখন ফুটিফাটা খেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো চাষ।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঝড়, শিলাবৃষ্টি শুরু হয় ময়নাগুড়িতে। রাত আটটায় ময়নাগুড়ি এলাকায় ফের শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে ময়নাগুড়ির পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ময়নাগুড়ির ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘রাতে এলাকার কৃষকরা অনেকেই ফোনে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। এ দিন সকালে ওই সমস্ত এলাকায় কর্মীদের পাঠানো হয়। যা অবস্থা দু’কোটি টাকার উপর ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। সব্জি এবং পাট চাষের ক্ষতি হয়েছে বেশি। অনেক জমির পাকা বোরো ধান ঝরে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমান ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে সোমবার পাঠানো হবে।’’ জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আম, লিচুরও ক্ষতি হয়েছে। ময়নাগুড়ির বিডিও শ্রেয়সী ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকার প্রধানরা ফোন করেছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে শিলাবৃষ্টির কথা শুনেছি । বিষয়টি নিয়ে ব্লক কৃষি আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলব।’’
স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাতে শিল পড়ার সঙ্গে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি। মাধবডাঙ্গার ব্রজহরি রায়ের পাঁচ বিঘা জমির পাট গাছ ডগা ভেঙ্গে মাটিতে লুটোচ্ছে। শর্মাপাড়ার কৃষক গৌরাঙ্গ শর্মার জমিতেও পাট নষ্ট হয়েছে। রূপেশ রায় এর টোম্যাটো ও বেগুন খেত শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। ঝরে পড়েছে টোম্যাটো, ফেটে গিয়েছে বেগুন। বার্নিগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তালগুড়ির কৃষক আবুসাহেব সিদ্দিক এর চার বিঘা জমির বোলান পদ্ধতিতে চাষ করা শশা গাছ নষ্ট হয়েছে। গাছগুলি লুটিয়ে পড়েছে জমিতে। আবুসাহেব বলেন, ‘‘গত মাসে ২ হাজার টাকা কুইন্টাল দরে শশা বিক্রি করে ছিলাম। এ বার শিল পড়েই সব নষ্ট হল।’’
সামগ্রিকভাবে জলপাইগুড়ি জেলার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট, ভুট্টা, সব্জি চাষের ক্ষতি হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরেও প্রচুর গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। অনেক বাড়ির টিনের চালা উড়ে গিয়েছে। শুক্রবার সন্ধের মুখে শিলিগুড়ির প্রমোদনগর, উৎপলনগর, সমরনগর এলাকাতেও ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়। ঝড়ে প্রমোদনগর এলাকায় অন্তত ২০ টি টিনের বাড়ি ভেঙে পড়েছে। পুরসভার তরফে তা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। মেয়র অশোক ভট্টাচার্য শনিবার ওই এলাকার পরিস্থিতি দেখতে যান।
ঠিক বিপরীত পরিস্থিতি উত্তর মালদহের চাঁচলে। এ দিন সকালে আকাশে কালো মেঘ দেখা গিয়েছিল। টানা গরমের পর বৃষ্টি নামতে পারে বলে বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশায় বুক বাঁধছিলেন চাষিরা। কিন্তু মিনিট দুয়েক হালকা ঝড়ের পরেই মেঘ উধাও! বৃষ্টিরও আর দেখা মেলেনি। দুপুরে ফের রোদ ওঠে। গরমও ছিল। বিকেলেও আকাশে হালকা মেঘের আনাগোনা ছিল। তাপমাত্রাও কমেছে। কিন্তু গোটা এপ্রিল তো বটেই, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ গড়ালেও এখনও ছিটেফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই চাঁচলে। বৃষ্টি না হওয়ায় ফুটিফাটা পাটের খেত। সেচ দিয়ে বোরো চাষ সামাল দিতে নাকাল হচ্ছেন চাষিরা। নেমে গিয়েছে জলস্তরও। ফলে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে পানীয় জলের কষ্ট চলছেই বাসিন্দাদের।
এ দিন রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহারের আকাশও মেঘলা ছিল। বেলা ১০টা নাগাদ রায়গঞ্জে আকাশ কালো মেঘ ছেয়ে গেলেও কয়েক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পর মেঘ কেটে যায়। এরপর আর বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ সেখানকার বাসিন্দারাও। তবে দিনভর রোদ না ওঠায় অন্য দিনের তুলনায় গরম কম ছিল। এ দিন ইসলামপুরেও ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কোচবিহারে দুপুরে জেলাজুড়ে বৃষ্টি হয়। তাতে গরম থেকে অনেকটাই স্বস্তি পান সকলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy