Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
বার্লো বালিকা বিদ্যালয়

আসন বাড়ন্ত, ভর্তির চাপে নাকাল স্কুল

ছাত্রীর অভাবে ধুঁকছে মালদহ শহরের বেশির ভাগ উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে আসনের চেয়ে বেশি ছাত্রী ভর্তির জন্য চাপ বাড়ছে মালদহের বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল বরাবরই প্রথম সারিতে। কিন্তু গত দু’বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একাংশের চাপে বাড়তি ভর্তি নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সায়নী মুন্সি
মালদহ শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

ছাত্রীর অভাবে ধুঁকছে মালদহ শহরের বেশির ভাগ উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে আসনের চেয়ে বেশি ছাত্রী ভর্তির জন্য চাপ বাড়ছে মালদহের বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

ওই স্কুল বরাবরই প্রথম সারিতে। কিন্তু গত দু’বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একাংশের চাপে বাড়তি ভর্তি নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভর্তি নিয়ে সমস্যা আগেও ছিল। ইদানীং তা প্রকট হয়েছে। সমস্যা আরও দানা বেঁধেছে লটারির মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি বাধ্যতামূলক করার পর থেকে। তাতে স্কুলে পড়াশোনার সমূহ ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষিকাদের একাংশ। ২০১২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ২৬৭ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। যেখানে আসন সংখ্যা ২৪০ জন। পরের বছরও সংখ্যা প্রায় একই। ২০১৪ সালে প্রাইমারি বিভাগের ছাত্রীদের ভর্তি বাধ্যতামূলক করা হলে সংখ্যাটা ১০০০ ছাড়িয়ে যায়।

এমনকী, এ ক্ষেত্রে শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইন (২০০৯) আইন মেনেও চলা হচ্ছে না বলে জানান শিক্ষিকারা কয়েক জন। সেখানে বলা আছে, বাড়ি থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের মধ্যে হতে হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে, দুই কিলোমিটারের বেশি তো বটেই এমনকি কুড়ি কিলোমিটার দূর থেও মেয়েরা পড়তে আসে স্কুলে। অথচ শহরেরই আরেক স্কুল শিবানী অ্যাকাডেমির ছাত্রী সংখ্যা সাকুল্যে ২২ জন। কম-বেশি একই অবস্থা কন্যা শিক্ষালয়, রামকিঙ্কর বা নিবেদিতা গার্লস হাই স্কুলের। শিবানী অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা সুতপা দাস খেদের সঙ্গে জানান, বহুবার বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করা হয়েছে। তবু অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। এ রকম চলতে থাকলে তাঁরা স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন বলেও জানিয়েছেন।

মালদহ জেলার সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রকল্প আধিকারিক ও তত্‌কালীন জেলা মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় পরিদর্শক চিন্ময় সরকার বলেন, ‘‘আমি পরিদর্শক থাকাকালীন বার্লো স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সমস্যা নিয়ে কেউ অন্তত আমার কাছে আসেনি। এমনকী বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনও আবেদনও আমার চোখে পড়েনি। আসল সমস্যা শুরু হয়েছে ২০১২-১৩ সালের নির্দেশিকা বেরোনর পর থেকে। তাতে একই উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি স্বতঃফূর্ত ভাবে হবে তা সুনিশ্চিত করা হয়। তার পর থেকেই সমস্যা চরমে ওঠে।’’ তিনি দাবি করেন, এই সমস্যা এখন অনেকটাই মিটেছে। কারণ প্রাইমারি বিভাগে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীর পঁচাত্তর শতাংশকেই শুধুমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মালদহ তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের নেতা প্রসেনজিত্‌ দাস স্বীকার করেন যে ভর্তি নিয়ে ‘হয়রানি’ আছে। তবে ভর্তির প্রক্রিয়াটি দলের ‘গাইডলাইন’ মেনেই করা হয়ে থাকে। বাম আমলের তুলনায় হাল আমলে অনেক সংখ্যক ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়মুখী করা গেছে বলে তাঁর দাবি।

বর্তমান সভাপতি দিলীপ দেবনাথ বলেন, ‘‘আমি ২০১৪ সাল থেকে এই পদে রয়েছি। আগে কে কী করেছে তার দায় আমি নেব না। আমি এই সালে প্রি-প্রাইমারি বিভাগে ভর্তির জন্য প্রায় ৭৫ জন ছাত্রী পাঠিয়েছি বার্লো স্কুলে।’’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী মজুমদার অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের পঞ্চম শ্রেণির এক-একটি বিভাগে ছাত্রীসংখ্যা এখন কম করেও ৬৫ জন। এক জন শিক্ষিকার পক্ষে এত মেয়েদের সামলানো বেশ কষ্টকর। অন্য দিকে মাইক্রোফোন-সহ বিভিন্ন পরিষেবার অভাব প্রভাব ফেলে পড়াশোনার ওপর। এতে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতি হয় পড়ুয়াদের। আমরা চাই অন্তত পক্ষে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির সব ক’টি ক্লাসে মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা থাকুক।’’

আরেক শিক্ষিকা বিরক্তির সঙ্গে বলেন, ‘‘এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে পরবর্তী কালে অন্য স্কুলে যোগ দেব কিনা সেটা ভেবে দেখব। ভুয়ো ঠিকানা দেখিয়ে ছাত্রী ভর্তির রেওয়াজও শুরু হয়েছে। এই গা-জোয়ারি ভাব এতটাই প্রবল যে, বর্তমান শাসক দলের কাছ থেকে হুমকি পর্যন্ত শুনতে হয়েছে আমাদের। এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার সংযোজন, ‘‘এখন ভয়ে ভয়েই থাকি। যে কেউ যে কোনও সময়ে ভর্তির জন্য অনুরোধ জানান। অথচ স্কুলের সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।’’ তবে দু’জনেই স্বীকার করেছেন, মূলত বার্লো স্কুলের ঐতিহ্যের কারণেই অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি হয় ফি-বছর।

খানিকটা একই সুর শোনা গেল এক নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির বাসিন্দা সোনালশেখর কুণ্ডুর গলায়। তাঁর কন্যা এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা থাকলেও স্কুলের অতীত রেকর্ড বা পরিবেশ ভাল বলেই মেয়েকে এখানে ভর্তি করেছি।’’ তাঁর ধারণা, ভবিষ্যতেও এই প্রবণতা বজায় থাকবে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণে পড়াশোনার মান পড়ে যাচ্ছে, এই যুক্তি অভিভাবক-অভিভাবিকারা মানতে নারাজ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE