Advertisement
২১ মে ২০২৪

ছোট বাগানই দিশা দেখাচ্ছে চা শিল্পে

কোথাও বাড়ির উঠোনে। কোথাও এক চিলতে অসমান জমিতে লাগানো চা গাছের বাগিচা। গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় এমন ছোট্ট বাগানের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। মিলেছে সরকারি সুযোগ-সুবিধেও। যার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের চা উৎপাদনেও। গত বছরে রাজ্যে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন কেজি।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

কোথাও বাড়ির উঠোনে। কোথাও এক চিলতে অসমান জমিতে লাগানো চা গাছের বাগিচা। গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় এমন ছোট্ট বাগানের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। মিলেছে সরকারি সুযোগ-সুবিধেও। যার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের চা উৎপাদনেও। গত বছরে রাজ্যে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন কেজি। এখন রাজ্যে চায়ের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক জোগান দিচ্ছে ছোট চা বাগান। গত বছরে দেশের মোট চা উৎপাদনের খসড়া হিসেব সম্প্রতি প্রকাশ করেছে চা পর্ষদ। সেই পরিসংখ্যান দেখে চমকে উঠেছেন চা বিশেষজ্ঞরা। এরপরেই রাজ্যের ছোট চা বাগানে উৎপাদিত পাতার গুণগত মান বাড়াতে উদ্যোগী হওয়ার কথা জানিয়েছে চা পর্ষদ।

দেশের কোথায় কত পরিমাণ চা উৎপাদিত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করে চা পর্ষদ। কোন ধরণের চা বাগান থেকে কত শতাংশ চা পাতা মিলছে তারও হিসেবও দেওয়া হয়। যার ওপর ভিত্তি করে আগামী বছর পর্ষদ কোনও এলাকায় অগ্রাধিকার দেবে তা ঠিক করে। স্থির করা হয় দেশের চা নীতিও। রাজ্যের সেই পরিসংখ্যান রিপোর্টে জানা যাচ্ছে মোট চা উৎপাদনের ৪৩ শতাংশই ছোট চা বাগান থেকে এসেছে। বেসরকারি হিসেব অবশ্য দাবি করছে গত বছরের মোট উৎপাদনের অর্ধেকই ছোট চা বাগানের পাতা।

এক নজরে ছোটরা

• সর্বোচ্চ ২৫ একর জমি নিয়ে তৈরি চা বাগানকে ছোট চা বাগান বলা হয় • উত্তরবঙ্গে ছোট চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার •জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার এবং দার্জিলিঙে রয়েছে ছোট বাগান • মোট শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ • ১ লক্ষ ২০ হাজার একর জমিতে উত্তরবঙ্গে ছোট চা বাগান গড়ে উঠেছে • বটলিফ কারখানার সংখ্যা ১৩৪ • গত বছর ছোট চা বাগানের মিলিত উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ • ২০১৫ সালে ছোট চা বাগানের উৎপাদন ছিল প্রায় ১৩ কোটি ১০ লক্ষ কেজি • ২০১৬ সালে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ কেজি

ছোট বাগানগুলি থেকে সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। এই চায়ের বাজার চাহিদাই সর্বাধিক। উত্তরবঙ্গের সিটিসি চা গুজরাত সহ বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হয়। চাহিদার জন্যই ছোট চা বাগানের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। ছোট্ট জমির ওপর বাগান তৈরি সম্ভব হলেও কারখানা গড়া সম্ভব নয়। তাই এই সব বাগানের চা পাতা বটলিফ কারখানায় বিক্রি করা হয়। চা পর্ষদের তথ্য জানাচ্ছে গত বছর বটলিফ কারখানা থেকে প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন কেজি চা পাতা বাজারে এসেছে। এর পুরোটাই ছোট চা বাগানের পাতা। গত বছর রাজ্যের মোট উৎপাদন প্রায় ৩৫৭ মিলিয়ন কেজি। অর্থাৎ সরকারি হিসেবে রাজ্যের মোট চা উৎপাদনের ৪৩ শতাংশই এসেছে ছোট বাগানগুলি থেকে। বেসরকারি হিসেবে অবশ্য অন্য দাবি করা হচ্ছে। বর্তমানে আয় বাড়ানোর জন্য বড় চা বাগান কর্তৃপক্ষও ছোট বাগানের থেকে কাঁচা পাতা কিনে নেয়। নিজেদের কারখানায় সেই পাতা প্রস্তুত করে বাজারে বিক্রি করে। সে কারণে চা পর্ষদের হিসেবে গত বছর বড় চা বাগানে উৎপাদিত ২০৩ মিলিয়ন কেজি চা পাতার যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে, তাতে ছোট বাগানের পাতাও রয়েছে বলে দাবি। এই তথ্য জানিয়ে ছোট চা বাগানগুলির উৎপাদন রাজ্যের মোট বাজারজাত চা পাতার ৫০ শতাংশ বলে দাবি করেছে ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন।

ছোট চা বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধিকে শুভ প্রবণতা বলে দাবি করলেও চা পর্ষদ চিন্তিত পাতার গুণগত মান নিয়ে। চা পর্ষদের উত্তরবঙ্গের উপ অধিকর্তা রামেশ্বর কুজুর এবং ছোট চা বাগানের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী সে কথা স্বীকার করে নেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Garden Tea Industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE