রায়গঞ্জে বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী।
কংগ্রেস পরিচালিত রায়গঞ্জ পুরসভার বিরুদ্ধে দল কেন আন্দোলন করে না, সেই প্রশ্নে দলের জেলা নেতাদের ভর্ৎসনা করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। দল সূত্রের খবর, তাঁদের সতর্ক করে আগামী ২২ অথবা ২৪ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবাইকে এক হয়ে পুরসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ আন্দোলন করারও নির্দেশ দিলেন তিনি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলকে ভয় পাই না। শহরের ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ বজায় রাখতে সাধারণ মানুষ পুরসভার পাশে রয়েছে। তাই তৃণমূলের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’
গত রবিবার চোপড়া ও ইসলামপুরে দলের দু’টি কর্মিসভায় যোগ দিয়ে রাতে মালদহ ফেরার পথে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রায়গঞ্জের সার্কিট হাউসে যান শুভেন্দুবাবু। সেখানেই তিনি জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য, তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সভাপতি তিলক চৌধুরী সহ তাঁদের অনুগামীদের ওই নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে ছিলেন তিলকবাবুর স্ত্রী তথা রায়গঞ্জ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কেয়া চৌধুরী, অমলবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত শহরের ৩ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দুই তৃণমূল কাউন্সিলর প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় ও রতন মজুমদার। সেখানেই অমলবাবু ও তিলকবাবুর উপস্থিতিতে শুভেন্দুবাবু তিন কাউন্সিলর সহ দুই গোষ্ঠীর নেতা ও তাঁদের অনুগামীদের কাছে জানতে চান, কংগ্রেস পরিচালিত রায়গঞ্জ পুরসভার বিরুদ্ধে দল কেন আন্দোলন করে না? তার মানে কী, কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা নিজের ক্ষমতায় বাসিন্দাদের সমস্ত নাগরিক পরিষেবা দিচ্ছে?
শুভেন্দুবাবুর এই প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পড়ে যান দলীয় কাউন্সিলর সহ দুই গোষ্ঠীর নেতা ও তাঁদের অনুগামীরা। তাঁরা কোনও জবাব দিতে না পারায় শুভেন্দুবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আর্থিক সাহায্যে পুরসভা বাসিন্দাদের নাগরিক পরিষেবা দেবে আর কংগ্রেস কাউন্সিলররা দলের কৃতিত্বের কথা প্রচার করবেন, তা হতে পারে না। আমি সবাইকে সতর্ক করে বলে যাচ্ছি, দল এ সব বরদাস্ত করবে না। এরকম চলতে বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জে দলের খারাপ ফল হবে। তাই অমলবাবু ও তিলকবাবুর নেতৃত্বে আপনারা সবাই এক হয়ে দেখুন, কবে পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায়।’’
কিছু ক্ষণ পর সুর নরম করে শুভেন্দুবাবু সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আগামী ২২ অথবা ২৪ জানুয়ারি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুরসভা থেকে একটু দূরে জমায়েত করে মিছিল করে গিয়ে পুরসভা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাবেন। চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি জমা দিন। কিন্তু কোনও বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর যাতে না হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকে মিছিল করার ও মাইক বাজানোর অনুমতি নেবেন।’’
গত প্রায় দেড় দশক ধরে একটানা রায়গঞ্জ পুরসভার ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। বর্তমানে পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড কংগ্রেসের দখলে। একটি করে ওয়ার্ড নির্দল ও সিপিএমের দখলে রয়েছে। ২০১১ সালে পুরসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল বিরোধী দলের মর্যাদা পেলেও এখনও পর্যন্ত পুরসভার বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও আন্দোলন করতে দেখা যায়নি।
তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমলবাবু ও পুরসভার বিরোধী দলনেতা প্রিয়তোষবাবু এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পবিত্র চন্দের দাবি, ‘‘তৃণমূল জানে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত পুরসভা চলছে। সে কারণে এত দিন ওঁরা আন্দোলনে নামার সাহস পাননি। শুভেন্দুবাবু রাজনৈতিক স্বার্থে দলের নেতা ও অনুগামীদের প্ররোচনা দিয়ে আন্দোলনে নামালেও সাধারণ মানুষ পুরসভার পাশে রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy