অব্যবহৃত এবং পরিত্যক্ত চা বাগানে পর্যটন প্রকল্প এবং ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে জমির সঙ্গে বাড়ির বানানোর জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে শ্রমিকদের দেওয়ার ঘোষণা— রাজ্য বাজেটে চা নিয়ে ঘোষণা মূলত এই দু’টিই। যাকে চা বাগান পরিচালকদের একাংশ শ্রমিককেন্দ্রিক বলে দাবি করে প্রশ্ন তুলেছেন, শিল্পের জন্য ঘোষণা কোথায়?
রাজ্যের প্রশাসনের তরফে দাবি, চা শিল্প নিয়ে নীতি ঘোষণা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। রাজ্যের তরফে এ নিয়ে কোনও নীতি ঘোষণার সুযোগ নেই। ঘোষণা করলেও, তা রূপায়ণ সম্ভব নয়। কারণ, কেন্দ্রীয় আইনে চা বাগান পরিচালিত হয় বলে সে সূত্রের দাবি। যদিও চা শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের একাংশ ‘অসম মডেল’-এর প্রসঙ্গ তুলেছেন। অসমে বড় পাতা চা তৈরিতে রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেয় এবং ছোট চা বাগানে উৎপাদনেও রাজ্যের তরফে কিছু ছাড় এবং সুযোগসুবিধা দেওয়া হয় বলে দাবি। এ রাজ্যে আগে থেকে চায়ের উপরে কৃষি আয়কর এবং ‘সেস’ মকুব রয়েছে। দু’বছর পর্যন্ত এই সেস ‘মকুব’ রয়েছে। সেটিকে স্থায়ী ভাবে মকুব করার দাবি রয়েছে ছোট চা চাষিদের।
বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে ৪,০২২টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্প শুধু বন্ধ এবং রুগ্ণ বাগানের জন্য। বাজেটে ‘চা সুন্দরী’
সম্প্রসারিত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে প্রকল্পে খোলা চা বাগানের শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। জমির সঙ্গে বাড়ি তৈরির জন্য এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা করেও রাজ্য সরকার দেবে বলে উল্লেখ রয়েছে। সম্প্রতি জলপাইগুড়ির বানারহাটে সরকারি সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চা বাগানের বাসিন্দা এবং যুবকদের হোম স্টে-সহ পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করতে আহ্বান করেছিলেন। সেই ঘোষণার প্রতিফলনও রয়েছে রাজ্য বাজেটে। উত্তরবঙ্গের অব্যবহৃত এবং পরিত্যক্ত চা বাগানে পর্যটন এবং স্বনির্ভরতার প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। চারটি চা বাগানে প্রায় ৩১২ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে বাজেটে।
ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘সিস্টা’র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা আরও ছিল।” চা বাগান পরিচালকদের তরফে বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। পরিচালকদের সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য বাজেটে চা নিয়ে নতুন কোনও ঘোষণা নেই, তাই বেশি কিছু বলার নেই।”
বাজেটে চা নিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে বিকেল থেকেই। বিজেপির জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “চা শিল্পের উন্নতির পরিকাঠামো বা শ্রমিকদের কল্যাণের নতুন কোনও কথাই শুনলাম না। সবই পুরনো কথা।” রাজ্যসভার তৃণমূলের সদস্য তথা চা শ্রমিক নেতা প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “তৃণমূল সরকারই চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছে, জমির অধিকার দিয়েছে। চা শিল্পকে একাধিক কর ছাড়ের সুবিধা দিয়েছে। চা নিয়ে অন্য কোনও দলের তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলার নীতিগত অধিকার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy