ভরসা: মীনাদেবীর দুই সন্তান মামনি আর রাজুর সঙ্গে দেখা করলেন জেলাশাসক। ছবি: অমিত মোহান্ত
জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী বড় মেয়ে মামনি বাড়িতে শয্যাশায়ী। ছোট ছেলে রাজুও পঞ্চম শ্রেণির পর থেকে চলার শক্তি হারিয়ে ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। সে কার্যত জ্ঞানশূন্য অবস্থায় ধুঁকছে। হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা চঞ্চল মণ্ডল ও মা মীনাদেবী, বিনা চিকিৎসায় দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে মৃত্যুমুখে এগিয়ে যেতে দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা পঞ্চায়েতের বদলপুর এলাকার ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মামনির বয়স এখন ২২ বছর। রাজু ১৭ বছরে পড়েছে। মামনি জন্ম থেকে চলাফেরা করতে পারেনা। রাজু সুস্থই ছিল। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় একদিন স্কুলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তারপর থেকে চলাফেরা ও কথাবার্তা বন্ধ। শনিবার দুপুর দুটো নাগাদ নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক অমলকান্তি রায় ছুটে যান রাজুদের বাড়ি। সঙ্গে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সিএমওএইচ ষষ্ঠীভূষণ কুণ্ডু। সে সময় মজুর খাটতে বাইরে ছিলেন চঞ্চলবাবু। ঘরে থাকা মীনাদেবী জেলাশাসককে দেখে
কেঁদে ফেলেন।
মাটির দেয়াল ও ভাঙা টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে একফালি বারান্দায় শুয়ে ছিল মামনি। বিছানা থেকে উঠতে পারে না। ছোট্ট শরীরটা থেকে মাঝেমধ্যে দুটি হাত কেঁপে ওঠে। রাজুর আরও ভয়াবহ অবস্থা। কোনও জ্ঞান নেই। হাত পা সরু হয়ে যাওয়া নিথর শরীরটা দেখে কে বলবে সে ১৭ বছরের কিশোর!
জেলাশাসকের সামনে মীনাদেবী বলেন, দুই ছেলেমেয়ের চিকিতসার জন্য কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের জমি জায়গা সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন দুবেলা খাবার জোগাড় হওয়াই ভার। টাকার অভাবে অসুস্থ প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে শুনে ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক মীনাদেবীকে বলেন, ‘‘চোখের জল মুছে ফেলুন। মুখ্যমন্ত্রীর তাঁদের পাঠিয়েছেন জানিয়ে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তিনি সান্ত্বনা দেন।’’
জেলাশাসক জানিয়েছেন, সোম থেকে বুধবারের মধ্যে ওঁদের বাড়িতে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা গিয়ে স্পট মেডিক্যাল বোর্ড করে প্রতিবন্ধী দুই ভাইবোনকে পরীক্ষা করবেন। তাঁদের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। পরিবারটির আর্থিক সঙ্কট মেটাতে দ্রুত খাদ্যসামগ্রী ও টাকা দিতেও উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy