Advertisement
০২ মে ২০২৪

পূর্ণিমার ঘরে এখন শুধুই অমাবস্যা

হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের কোর্স শেষ হতে আর মাত্র ৩ মাস বাকি ছিল। ৩১ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে বালুরঘাটে বাবা-মাকে শেষ বারের মতো ফোন করে মেয়ে বলেছিল, কোর্স শেষ হলেই হোটেলে চাকরি মিলে যাবে। তার পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ওলট-পালট হয়ে গেল দেবনাথ পরিবারে।

মেয়ের ছবি হাতে পূর্ণিমার বাড়িতে মা তনিশাদেবী। — অমিত মোহান্ত

মেয়ের ছবি হাতে পূর্ণিমার বাড়িতে মা তনিশাদেবী। — অমিত মোহান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের কোর্স শেষ হতে আর মাত্র ৩ মাস বাকি ছিল। ৩১ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে বালুরঘাটে বাবা-মাকে শেষ বারের মতো ফোন করে মেয়ে বলেছিল, কোর্স শেষ হলেই হোটেলে চাকরি মিলে যাবে। তার পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব ওলট-পালট হয়ে গেল দেবনাথ পরিবারে। রবিবার গভীর রাতে কলকাতার সার্ভে পার্ক এলাকার একটি অভিজাত ক্লাবের ঘর থেকে বালুরঘাটের ফরিদপুর এলাকার বাসিন্দা পূর্ণিমা দেবনাথের (১৭) ঝুলন্ত দেহ পুলিশ উদ্ধার করে।

সোমবার সকালে বালুরঘাটের আইটিআই কলেজ থেকে বাড়িতে পূর্ণিমার অপমৃত্যুর খবর পৌঁছে দেওয়ার পর থেকেই দিনমজুর বাবা ও মা ভেঙে পড়েছেন। তার মতো হাসিখুশি মেয়ে আত্মহত্যা করবে, বিশ্বাস করতে পারছেন না বাবা প্রকাশ দেবনাথ। মা তনিশাদেবীর অভিযোগ, কলকাতার ওই ক্লাবের কর্মী এক যুবক দু’মাস আগে তাঁদের মেয়েকে জোর করে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিল। ফলে মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ওই হোটেল কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না বলে বাবা প্রকাশবাবু এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ আমাদের কাছে এলে নিশ্চয়ই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’

গত মাসে বোল্লাকালী মেলার সময় বাড়িতে এসে পূর্ণিমা তাঁর মাকে ওই ঘটনার কথা জানায়। তনিশাদেবী বলেন, ‘‘৩১ ডিসেম্বর পিকনিক করছে বলে পূর্ণিমা ফোনে জানিয়েছিল। এমন হাসিখুসি মেয়ে আত্মহত্যা করবে কেন?’’ ওই ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘‘ওই যুবক কর্মী হিসেবে নতুন যোগ দিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণ উপলক্ষে হোটেলে অনুষ্ঠান হয়েছিল। তারা দু’জনেই সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু কোনও অস্বাভাবিকতা তাদের আচরণে চোখে পড়েনি।’’ তবে পূর্ণিমার সঙ্গে শুভর প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা তিনি বলতে পারেননি। সিঁদুরের বিষয়টিও তাঁদের গোচরে আসেনি বলে দাবি করেন সঞ্জীববাবু।

গত বছর গ্রামের খাসপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করে বালুরঘাট আইটিআই কলেজে ভর্তি হয় পূর্ণিমা। বাবার দিনমজুরি আর মায়ের পরিচারিকার কাজের আয়ে কোনও মতে সংসার চলে। পূর্ণিমাই ছিল বড়। মেজ ভাই ১৬ বছরের প্রতাপ ষষ্ঠ শ্রেণির পরে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে কলকাতাতে একটি মোটর গ্যারাজে কাজ করে। ভাঙা টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়ার ঘরেই ছোট ভাই অসীম চতুর্থ শ্রেণির পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। হতদরিদ্র সংসারে আশার আলো দেখাতে তাই কলেজ থেকে কলকাতায় যায় পূর্ণিমা। ওই ক্লাবে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট কোর্সেরই একটি অঙ্গ। বিনিময়ে স্টাইপেন্ডও দেওয়া হতো তাকে।

কলেজ অধ্যক্ষ কুন্তল ঘোষ বলেন, ‘‘২০১৫-১৬ সেশনের কোর্সে পূর্ণিমার সঙ্গে আরও এক ছাত্রী এবং দু’জন ছাত্রকে কলকাতায় পাঠানো হয়। গত বছর অক্টোবরে তাঁদের ভর্তি করা হয়ছিল। ওই দলে যাওয়া অন্য ছাত্রীটি অবশ্য ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কোর্স সম্পূর্ণ না করেই বাড়ি ফিরে আসে।’’ কলকাতায় গিয়ে পূর্ণিমার দেহ নিয়ে আসার সামর্থ্যও নেই তাঁর পরিবারের। এ দিন তাই কলেজের তরফে পাঁচ হাজার টাকা প্রকাশবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hanged dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE