সিন্ডিকেটের গেরোয় এ বার বন্যা প্রতিরোধের কাজও! বর্ষার আগে বাঁধ মেরামতির কাজ হাসিল করতেই উত্তরবঙ্গে সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। সেচ দফতরের কাজ করা কয়েকজন ঠিকাদারের আশঙ্কা, ওই সিন্ডিকেট চক্রকে না রুখতে পারলে বন্যার জল আটকানোর টাকা কার্যত বন্যার জলেই ভেসে যাবে!
ভোট বিধির কারণে এখন বন্যা প্রতিরোধের কাজ হচ্ছে না। কিন্তু, বর্ষার আগে বাঁধ মেরামতি, সংস্কারের কাজ করা জরুরি। ভোট পর্ব না মিটলে যথাযথ ভাবে টেন্ডার করা সম্ভব নয়। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি রুখতে কিছু কাজ ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে করা ছাড়া উপায় নেই বলে সেচ দফতরের আধিকারিকদের দাবি। এই সময়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা। সেই কাজ যাতে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, সে জন্য একটি সিন্ডিকেট সেচ দফতরের নানা অফিসে যোগাযোগ রাখছে। অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের একাংশের মদতে কয়েকজন ঠিকাদার মিলে ওই সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।
কী ভাবে এই কাজ হাসিল করতে চাইছে সিন্ডিকেট চক্র?
অভিযোগ, কবে জরুরি ভিত্তিতে কাজের জন্য দরপত্র বা ‘কোটেশন’ চাওয়া হবে তা জানতেই নিয়মিত দফতরগুলিতে যাতায়াত শুরু করেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সিন্ডিকেটের সদস্যরা বর্তমানে সকলেই তৃণমূলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই সুবাদে সেচ দফতরের আধিকারিক-কর্মীদের একাংশের কাছেও সিন্ডিকেটের হয়ে উপরমহল থেকে সুপারিশ চলে আসছে।
যে সব সংস্থা নিয়মিত সেচ দফতরের কাজ করে তারাও যাতে বরাত নিয়ে অনিয়মের কোনও অভিযোগ জানাতে না পারে, সে কারণে ধমক-হুমকি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। মুখ বন্ধ রাখলে বরাদ্দ কাজের ৫ থেকে ৮ শতাংশ অর্থ ‘প্যাকেজ মানি’ ধরিয়ে দেওয়া হবে বলেও সিন্ডিকেটের তরফে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেতা-আধিকারিক সকলে টাকা ধরিয়ে বন্যা রোখার মূল কাজের কী হবে তা নিয়েই সংশয়ে ঠিকাদারদের অনেকেই।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিস্তা-জলঢাকা-তোর্সা মিলিয়ে জলপাইগুড়ি এবং ডুয়ার্সে প্রাক-বন্যার অন্তত ৪০ কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ভোট বিধিতে আটকে গিয়েছে। কিছু কাজ চলতি মাসেই বা বড় জোর আগামী মাসের গোড়াতেই সেরে ফেলতে হবে। না হলে, বৃষ্টিতে নদীর জল বাড়তে শুরু করলেই বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। ভোট বিধি বাঁচিয়ে এই কাজগুলি ছোট-ছোট ভাগ করে প্রথাগত টেন্ডার না করে জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে বলে সেচ কর্তাদের দাবি। নিয়ম অনুযায়ী ৪ লক্ষ টাকার কমের প্রকল্প হলে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা যায়।
প্রশ্ন উঠেছে, সিন্ডিকেট চক্রকে কাজ পাইয়ে দিতেই কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ফেলে রাখা হয়েছিল? সেচ দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, প্রকল্পের কাজগুলি কেন্দ্রীয় ভাবে হয় না। বিভিন্ন মহকুমা দফতর থেকে জেলায় প্রকল্পের তালিকা আসে। সেই তালিকা প্রথমে জেলায় যাওযার পরে সেখান থেকে রাজ্যের দফতরে পৌঁছয় এবং অনুমোদন হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগে বলেই দেরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মানস ভারতী বলেন, ‘‘কাজ যাতে যথাযথ নিয়ম মেনে হয় তা দেখার নির্দেশ দিয়েছি। সিন্ডিকেটের হাতে যাতে কাজ না যায় সেটাও দেখা হবে।’’
আটকে থাকা কাজের সংখ্যা এবং বরাদ্দের বহরও বেশ লম্বা। দফতর সূত্রের খবর, শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি মহকুমাতেই প্রায় ১৫ কোটি টাকার টেন্ডার আটকে রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বাকি সব জেলা ধরলে আটকে থাকা কাজের পরিমাণ ৫০ কোটি পেরিয়ে যাবে বলেই দাবি। সেচ দফতরের ঠিকাদারদের সংগঠন ‘ফোকা’র বাইস চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহ দাবি করেন, ‘‘কাজগুলি সব সময়ে হলে ভাল হতো। যাই হোক সকলে সমান ভাবে কাজের সুয়োগ পাক, এটাই আমাদের দাবি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy