Advertisement
২১ মে ২০২৪

সিপিএম প্রার্থীকে পথে হুমকি, নালিশ

তুফানগঞ্জে শাসক সিপিএমের ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীদের রাস্তা আটকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ১ নম্বর ওয়ার্ডে খোদ পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়ালকে আবার বলা হয়, ‘কাকু আর প্রচার করবেন না’। ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও এক সমর্থকের বাড়িতে গিয়ে শাসনো হয় বলে অভিযোগ।

অরিন্দম সাহা
তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

তুফানগঞ্জে শাসক সিপিএমের ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীদের রাস্তা আটকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ১ নম্বর ওয়ার্ডে খোদ পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়ালকে আবার বলা হয়, ‘কাকু আর প্রচার করবেন না’। ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও এক সমর্থকের বাড়িতে গিয়ে শাসনো হয় বলে অভিযোগ। তার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই সমর্থকের বৃদ্ধ বাবা। সম্প্রতি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নমিতা দাসের বাড়ির গেট ভাঙচুর করার অভিযোগও ওঠে। দেওয়াল লিখতে গেলেও বাধা দেওয়া, ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ ওঠে।

তুফানগঞ্জে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের অভিযোগের তালিকা এমনই দীর্ঘ। সন্ত্রাসের অভিযোগে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস ও বিজেপিও। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারেননি তাঁরা। এমনকী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। বিজেপিও অভিযোগ করেছে, ৭, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা প্রচারে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক কর্মীর মাথা ফাটান হয়েছে।

তৃণমূল অবশ্য ওই সব অভিযোগ আমল দিতে চায়নি। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, এখন সন্ত্রাস কোথায়? বাম আমলে তুফানগঞ্জের বাসিন্দারা হাড় হিম করা সন্ত্রাস দেখেছেন। তৃণমূলকর্মীকে দলের অফিসে ঢুকে ছুরিকাহত করার অভিযোগ রয়েছে। কোনও ওয়ার্ডে ঠিকঠাক প্রচার করতে পারেনি বিরোধীরা। তৃণমূল প্রার্থী হওয়ায় এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। গত পুরভোটেও বহু তৃণমূলকর্মী আক্রান্ত হন। তারপরেও আতঙ্ক-ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারতেন না কেউ। সন্ত্রাসের আবহ নিয়ে এমন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে এ বার পুরভোট হচ্ছে তুফানগঞ্জে।

যেখানে ১৯৯৫ সাল থেকে টানা জিতেছে সিপিএম। চারবারই পুর চেয়ারম্যান হন সুভাষ ভাওয়াল। জিতেছিলেনও ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এবার ওই আসনটি সংরক্ষণের গেরোয় পড়েছে। সুভাষবাবুকে গত নির্বাচনে তৃণমূলের জেতা ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। ফলে রীতিমতো লড়াইয়ের মুখে সিপিএমের তুফানগঞ্জের পুর সেনাপতি। দলের অন্দরে কর্মীদের একাংশের মধ্যে এ নিয়ে চাপা অসন্তোষ রয়েছে। কোন যুক্তিতে অপেক্ষাকৃত ‘সহজ’ ওয়ার্ড ছেড়ে খোদ সুভাষবাবুকে ‘কঠিন’ এলাকায় প্রার্থী করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে ওই পুরবোর্ড দখলে চারবারের স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা ভুলতে রীতিমতো মরিয়া তৃণমূল শিবির। প্রচারে তুফান তুলেছে তাঁরা। সেই নিরিখে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস।

গত ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে ১২ আসনের ওই পুরসভায় ৮টিতে সিপিএম ও তৃণমূল ৪টি আসন জেতে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের শহরের ৪ টি আসনে বাম, বিজেপি ২ টিতে এবং তৃণমূল ৬টিতে এগিয়ে ছিল। এবার পুরসভার নির্বাচনের ফলাফল কী হবে? সিপিএমের বিদায়ী চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “লোকসভায় মোদী হাওয়া ছিল। এবার তা নেই। তবে অন্য অনেক যদি এবং কিন্তুর ওপর সব কিছু নির্ভর করছে।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য তমসের আলি বলেন, “এলাকার উন্নয়ন অনেক হয়েছে। পরিষেবাও ভাল। তাই গোটা এলাকায় সন্ত্রাস করেছে তৃণমূল। লেখার দেওয়াল পর্যন্ত পাইনি। তবু অবাধ ভোট হলে আমরা জিতব। সুভাষবাবুও ১ নম্বর ওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করবেন।” কংগ্রেস নেতা দেবেন বর্মা বলেন, “সন্ত্রাসমুক্ত ভোট হলে আমরা যে ৭টি ওয়ার্ডে লড়ছি তার সব কটিতে জিতব। সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি সবার ওপরেই মানুষ বীতশ্রদ্ধ।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি বিমল সরকার বলেন, “তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। বামেরা আত্মসমর্পণ করে বসে পড়েছে। সব ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী নেই। মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবেন।”

তৃণমূলের এখানে ‘কাঁটা” গোষ্ঠীকোন্দল সমস্যা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রতীক পেয়েও দলের কোন্দলে ‘গোঁজ’ প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার উপক্রম হয়েছিল দলের শহর সভাপতি হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের। কোন্দলের জেরে টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক তৃণমূল নেতাও। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “ভিত্তিহীন অপপ্রচার করে লাভ হবে না। সবাই একছাতার নীচে রয়েছেন। ৩৪ বছর যারা সন্ত্রাস করেছে তাঁদের মুখে ওসব কথা মানায় না। এবারই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পুরভোট ভোট হচ্ছে।”

হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমের চারবারের চেয়ারম্যান নিজের ওয়ার্ডের বাজার, রাস্তা, মরা রায়ডাক সংস্কারের মতো কোনও কাজ করতে পারেননি। তাই অন্য ওয়ার্ডে পালিয়ে গিয়েছেন। ১২টি ওয়ার্ডেই আমরা জিতব। জনসমর্থন হারিয়ে বিরোধীরা সন্ত্রাস নিয়ে মনগড়া কথা বলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE