Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পুরোভাগে বাম-তৃণমূল, লড়াইয়ে উধাও বাকিরা

কয়েক মাসেই ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। পর পর নির্বাচনে হেরে ক্রমশ তলিয়ে যাওয়া বামেরাই এ বার কোচবিহারে শাসকদলের প্রধান প্রতিপক্ষ। অন্তত প্রচারের দৌড় থেকে তেমন তথ্যই উঠে আসছে সামনে। সর্বত্র দু’দলের পতাকায় ছয়লাপ। দেওয়াল লিখন। সকালে সন্ধ্যায় বাড়ি বাড়িতে ঘুরে প্রচার। পদযাত্রা।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

কয়েক মাসেই ছবিটা বদলে গিয়েছে আমূল। পর পর নির্বাচনে হেরে ক্রমশ তলিয়ে যাওয়া বামেরাই এ বার কোচবিহারে শাসকদলের প্রধান প্রতিপক্ষ।

অন্তত প্রচারের দৌড় থেকে তেমন তথ্যই উঠে আসছে সামনে। সর্বত্র দু’দলের পতাকায় ছয়লাপ। দেওয়াল লিখন। সকালে সন্ধ্যায় বাড়ি বাড়িতে ঘুরে প্রচার। পদযাত্রা। ছোট ছোট সভা। লড়াইটা যেন শুধুমাত্র তৃণমূল ও বামেদের মধ্যে। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপি কোচবিহার পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০ টি ওয়ার্ড থেকে লিড নিয়েছিল। কিন্তু এখন দু-একটি ওয়ার্ড বাদ দিলে অধিকাংশ জায়গাতেই লড়াইয়ের ময়দান থেকে উধাও তারা। তেমন ভাবে নজরে নেই কংগ্রেসও।

কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এ বারের পুর নির্বাচনে লড়াইটা হচ্ছে বামেদের সঙ্গে আমাদের। এখানে বিজেপি বা কংগ্রেসের কোনও ভূমিকা নেই। তারা কোনও ফ্যাক্টর হবে না। আমরা বামেদের হারিয়েই ফের পুরসভা দখল করব।” বামফ্রন্টের নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের দাবিও প্রায় এক। তিনি বলেন, “রাজ্যের মানুষ দুটো পক্ষ বেছে নিয়েছেন। হয় বাম না হয় তৃণমূল। এখানে বিজেপি, কংগ্রেস এরা কোনও ফ্যাক্টর নয়। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। শাসক দলের প্রার্থীদের হারিয়ে আমরা জয়ী হব।” বামেদের অপর এক নেতা বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময়কালে বিজেপি হাওয়া উঠেছিল। সে সময় বামেদের অবস্থা খারাপ ছিল। এখন সে পরিস্থিতি নেই।”

বিজেপি অবশ্য শাসক দল এবং বামেদের দাবি মানতে নারাজ। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “৩৪ বছরের বাম শাসন এবং সাড়ে তিন বছরের তৃণমূল শাসনে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। এদের হাত থেকে মুক্তি চাইছেন সাধারণ মানুষ। তার প্রমাণ লোকসভা ভোটে হয়েছে। কোচবিহার পুরসভায় আমরা দশটি আসনে এগিয়ে ছিলাম। তিনটিতে দ্বিতীয় হয়েছি। ওই পুরসভা আমারই দখল করব।” কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরীর দাবি, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কংগ্রেস এবার বোর্ড দখল করবে।

১৯৯৫ সাল থেকে দীর্ঘ সময় কোচবিহার পুরসভার দখল ছিল কংগ্রেসের। ওই সময় পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন বীরেন কুন্ডু। ২০১৩ সালে সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন বীরেনবাবু। ২০১৪ সালে অগস্ট মাসে বীরেনবাবুর মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের দীপক ভট্টাচার্য। ১৯৯৫ সালের আগে কোচবিহার পুরসভার ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তাই কোচবিহার পুরসভার মূল লড়াই ছিল বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের। এবারে ওই ছবি বদলে গিয়েছে। দলের কাউন্সিলরদের বেশিরভাগ তৃণমূলে যাওয়ায় কোনঠাসা হয়ে পড়ে কংগ্রেস।

অন্যদিকে পুরসভার প্রধান শক্তিশালী দল হয়ে ওঠে তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি দশটি আসনে এগিয়ে যায়। তাতে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠবে বলে ধারণা তৈরি হয় অনেকের। কিন্তু ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই সেই পরিস্থিতি যেন পাল্টে যায় রাতারাতি। বামেরা প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নামে। দেওয়াল লিখন, পোস্টার, সভা সবেতেই বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে তারা।

বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, তৃণমূল বা বামেদের মতো টাকা নেই তাদের। তাই তাঁদের পোস্টার, ফেস্টুনের সংখ্যা কম।

বিজেপি সভাপতি বলেন, “কিছু মানুষ ভয়ে শাসক দলের সঙ্গে রয়েছেন। আর বামেরা বাইরের থেকে লোক এনে শহরে প্রচারে নেমেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওঁদের লোকসংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু জয়ী হব আমরাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE