সঙ্গীতা কুণ্ডুর অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তে পুলিশের একাংশের গাফিলতি ধামাচাপা দিতে বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) কয়েকজন আসরে নেমেছেন বলে সন্দেহ করছেন পরিবারের অনেকেই। তাঁদের এমন সন্দেহের কারণ, সঙ্গীতাকে অপহরণের অভিযোগে তাঁর নিয়োগকারী সংস্থার মালিক পরিমল সরকারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার ‘কেস ডায়েরি (সিডি)’ আদালতে পাঠিয়েও রাতারাতি তা ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। আদালত সূত্রের খবর, মামলার শুনানি হলে কিংবা কোনও কারণে পিছিয়ে গেলে তবেই ‘সিডি’ দেওয়া যাবে বলে সিটের অফিসারদের একাংশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিটের একাংশের যুক্তি, তারা যে সব তথ্য গত দুদিনে পেয়েছেন তাও সিডিতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্যই ফেরত চাওয়া হয়েছিল। যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা এ দিন বলেছেন, ‘‘সিট গঠনের পরে নানা তথ্য সামনে আসছে। সঙ্গীতার হদিস পেতে সবরকম চেষ্টা হচ্ছে। গাফিলতির নেই। কোথাও গাফিলতি ধরা পড়লে ব্যবস্থাও হবে।’’
সিপির আশ্বাসে অবশ্য সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবীর ক্ষোভ কমছে না। তিনি বলেন, ‘‘ভক্তিনগর থানার কয়েকজন আমার মেয়ে টাকা চুরি করে পালিয়েছে বলে প্রমাণ করতে চাইছেন। তা হলে পরিমলবাবু মিসিং ডায়েরিতে সে কথা কেন লেখেননি। থানার একাংশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে।’’
পরিমলবাবুর বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিনের কর্মীর প্রতি সহানুভূতি বশতই টাকার কথা অভিযোগে উল্লেখ করিনি।’’
গত ১৭ অগস্ট শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি জিম, পার্লার ও ডান্স অ্যাকাডেমির কর্মী সঙ্গীতা নিখোঁজ হন। ২৬ অগস্ট মালিক পরিমলবাবু মিসিং ডায়েরি করেন। ৫ সেপ্টেম্বর পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন অঞ্জলিদেবী। তা নিয়ে তদন্তে নেমে ভক্তিনগর থানা ও পরে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট গড়িমসি করে বলে অভিযোগে শিলিগুড়ির একাধিক সংগঠনের আসরে নামে। উত্তরবঙ্গের এডিজি তথা আইজি এন রমেশবাবুর সিপির রিপোর্ট তলব করেন। সিপি ‘সিট’ গঠন করেন। এ দিনও ‘মেয়ারটেল অ্যান্ড অর্গানাইজেশন’-এর পক্ষ থেকে মাধবী মুখোপাধ্যায় সিপি অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।
এই অবস্থায়, আজ, মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের অবকাশকালীন বিচারকের এজলাসে পরিমলবাবুর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা। সে জন্য সিডি জমা পড়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সিটের অফিসারদের কয়েকজন জানতে পেরেছেন, তদন্তকারী এক অফিসার সঙ্গীতা কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে নথিতে উল্লেখ করেছেন। অথচ, তদন্তকারী অফিসার পরিমলবাবু কিংবা তাঁর অন্য যে কর্মীরা সঙ্গীতাকে চেনেন, তাঁদের জবানবন্দি দুমাসে নিতে পারেননি কেন তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে পুলিশের একাংশের ধারনা। তখনই তাঁরা সিডিতে সিটের পাওয়া তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করেন। জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির কয়েকজন আইনজীবী জানান, সিডি মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি বলেই তা জমা দিয়ে শুনানির ২৪ ঘণ্টা আগে তা ফিরিয়ে সংযোজনের চেষ্টা হলে অনেক প্রশ্নই উঠতে পারে। নিখোঁজ তরুণীর দাদা শম্ভুবাবু জানান, তদন্তের নামে কতটা কী হয়েছে তা আদালতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy