Advertisement
১৯ মে ২০২৪

উত্তরের চিঠি

সমগ্র উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ির শ্রীবৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেই। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শহরের প্রতি দীর্ঘ চার দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের বিমাতৃসুলভ আচরণের ইতি নেই।

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

এখনও অবহেলার শিকার জলপাইগুড়ি শহর

সমগ্র উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ির শ্রীবৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেই। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শহরের প্রতি দীর্ঘ চার দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের বিমাতৃসুলভ আচরণের ইতি নেই। প্রকৃতপক্ষে অভিভাবকহীন অবস্থায় ধুঁকছে অতীতের সুন্দর এই শহর।

পূর্ববঙ্গের বর্ধিষ্ণু বাঙালিরা সেই ইংরেজ আমলেই এখানকার নগরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশি ইংরেজ, জঙ্গলঘেরা ডুয়ার্স অঞ্চলের হিংস্র জন্তু ও কঠিন ম্যালেরিয়ার সঙ্গে লড়েও তাঁরা এই শহরে পত্তন করেন বিভিন্ন চা-শিল্প সংস্থার হেডঅফিস। কোনও বাগিচা-মালিককেই এর জন্য অন্তত কলকাতামুখী হতে হয়নি। জলপাইগুড়ি শহরের থেকে চা-বাগানগুলিকে প্রত্যন্ত ডুয়ার্স অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করে, উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির মূল কাঠামো গড়ে তোলেন তাঁরা। বলা বাহুল্য, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেরও উৎসমুখ ওই চা-বাগানগুলি। সেই সঙ্গেই নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সরকারি অফিস, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ব্যাঙ্ক গড়ে ওঠে এই বিভাগীয় শহরকে কেন্দ্র করে। শিল্প, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক চর্চার স্মৃতিও এ শহরের কম নয়। এ ছাড়া শহরের দু’-দু’টি প্রেক্ষাগৃহ ও শিশু-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখত তো বটেই, এমনকী এখানকার বেশ কয়েকটি নামী ব্যায়ামাগারও ছিল পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। এক সময়ে এই জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক অফিস বলতেই ঝকঝকে চকচকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটা ব্যাপার বোঝাত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই শহর উত্তরবঙ্গের গর্বস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ৭০-এর দশকের পর থেকেই এই শহরের ভগ্নদশা শুরু হয়। চা-বাগানগুলিতে শ্রমিক বিক্ষোভ, ট্রেড ইউনিয়নের পারস্পরিক লড়াই এবং সেই সঙ্গেই শহরের চা-বাগানগুলির হেড অফিস কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়া শুরু হয়। একই সঙ্গে বাগানগুলির মালিকানা বদলের পর চা-শিল্পে এক তুমুল অস্থিরতার সংকট স্থায়ী জায়গা করে নেয়। শহরের পূর্ব প্রান্তে তিস্তা নদীর ধার ঘেঁষা ছাত্রদের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি দীর্ঘকালের নামী স্কুল। অথচ এক সময় কলেজে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও কলকাতার উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই তা কখনও সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘ দু’শতকের পরও হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ আজও এখানে চালু হল না। অথচ ক্রেতা সুরক্ষা সার্কিট বেঞ্চ শিলিগুড়িতে চালু হয়ে গেল। উপেক্ষিত রইল জলপাইগুড়ি। শহরের শত বছরের প্রাচীন রেল স্টেশনগুলির দুর্দশাও প্রকট। রেলের জমির উপর বাজার বসে আছে। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের তা নিয়ে কোনও হুঁশই নেই। হুঁশ নেই রাজনৈতিক নেতাদেরও। শহরে থাকা সেনাবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট সেন্টারটিও কোনও অছিলায় তুলে নিয়ে যাওয়া হল। তারও কোনও সদুত্তর নেই। এই শহরের হাসপাতাল ভবনও এখন জরাজীর্ণ, উপযুক্ত সংস্কারের ব্যবস্থা নেই। পুলিশ হাসপাতালের অবস্থাও করুণ রয়েছে। পুলিশ লাইনের প্যারে়ড-মাঠের বহু অংশই সঙ্কুচিত। অতীতের পিলখানাও নেই। যদিও এখন একমাত্র আশার কথা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে জলপাইগুড়িতে।

— কিরণশঙ্কর ঘোষ। নিউটাউন, জলপাইগুড়ি।

চালু হোক ‘কর্মবীর’ পুরস্কার

বিধানসভা থেকে লোকসভা—সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নিবার্চনে বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকের দফতরের কিছু সংখ্যক দক্ষ কর্মচারী অক্লান্ত পরিশ্রম করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করিয়ে দেন। রাজ্যের সব জেলাতেই জেলাস্তর, মহকুমা স্তর, ব্লক পর্যায়ের নানা সরকারি অফিসগুলিতে অনেক সুদক্ষ কর্মচারী আছেন, যাঁদের ইংরেজিতে চিঠি লেখার দক্ষতার প্রশংসা অনেক আধিকারিকরাই করে থাকেন। অনেকেই রয়েছেন যাঁদের কর্মকুশলতা সর্বজনবিদিত। শোনা যায়, এক সময় কোচবিহার কালেক্টরেটের অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং বড়বাবুরা কখনও কোনও নোটশিট নিয়ে গেলে অতিরিক্ত জেলাশাসকরা তৎক্ষণাৎ তা সই করে দিতেন, এতটাই সুনাম ছিল ওই কর্মীদের। আজও এমন মানুষ নানা জায়গায় রয়েছেন। আবার অনেকে অবসর নিয়েছেন, কেউ কেউ মারাও গিয়েছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী অনেক পুরস্কারই ঘোষণা করেছেন। দক্ষ কর্মচারীদের জন্য ‘কর্মবীর’ পুরস্কার ঘোষণা করার বিষয়টি একটু বিবেচনা করে দেখলে ভাল হয়।

— রাজু সরখেল দিনহাটা, কোচবিহার

বাজার পরিদর্শন করুক মন্ত্রীরা

‘মন্ত্রী বাজারে ঢুকতেই সব্জির দাম কমল’, শীর্ষক খবর পড়ে ভাল লাগল। প্রায়শই সব্জির দাম সব সময় চড়া থাকে। আমরা সাধারণ মানুষদের আয় সীমিত। ফলে সাধ্যাতীত খরচ করতে পারি না। অথচ সব্জির দাম লাগামছাড়া। যেমন আলু ২০-২৫ টাকা। তাছাড়া লঙ্কা, আদা, রসুন-সহ বাকি সব্জির দামও আকাশছোয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে মাছ এবং ফলমূল তো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই মাঝে মাঝেই মন্ত্রীদের বাজার পরিদর্শন করা উচিত। ফড়েদের দাপট কমাতেই এই কাজ করা দরকার। পুর কর্তৃপক্ষ যদি সব্জির মূল্য নির্ধারিত করে বাজারের প্রবেশপথগুলিতে টাঙিয়ে দেন তাহলে কেনাকাটা করতে সুবিধা হয়।

— ফাল্গুনী চক্রবর্তী দিনহাটা রোড, কোচবিহার।

পরিষেবা অমিল

কোচবিহার শহরের নিউ টাউন পোস্ট অফিস একটি ৮ ফুট বাই ১০ ফুট অপরিসর টিনের ঘরে চলছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষকে একচিলতে বারান্দায় গাদাগদি করে লাইন দিতে হয়। গত ৬-৭ মাস যাবৎ পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। একজন কর্মীকেই সমস্ত কাজ করতে হয়। প্রায়ই ইন্টারনেট লিঙ্ক থাকে না। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই পেনশন তুলতে আসেন বা স্বল্পসঞ্চয় নিয়োগকারী। রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে লাইন দিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রায়ই শূন্য হাতে ফিরতে হয়। দু’মাস আগে অনলাইন চালু হলেও ঠিকঠাক চলছে না।

— কুমার ভূপেন্দ্রনারায়ণ সিনহা, চাকির বাজার, কোচবিহার।

নজর দিক প্রশাসনিক কর্তারা

আমি জলপাইগুড়ি শহরের একজন প্রবীণ নাগরিক। এই শহরের সঙ্গে যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। আমাদের শহরের প্রাণকেন্দ্র জলপাইগুড়ি কলাকেন্দ্র, যা সরোজেন্দ্র দেব রায়কতের নামে নামাঙ্কিত। কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থার প্রতি একটু যত্নশীল হওয়ার জন্য রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের নজর আকর্ষণ করতে চাই। প্রেক্ষাগৃহটি ২০১৪ সালে পিপিপি মডেলে তৈরি। কলকাতার একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে যায়। অধুনা সেখানে প্রতিদিন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং সেখানেই আবার সরকারি, ,বেসরকারি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হযে থাকে। কারণ প্রেক্ষাগৃহটির আসন সংখ্যা ৯৬১-র মতো। অন্যান্য জায়গায় আসন সংখ্যা এর তুলনায় অনেক কম। এই কলাকেন্দ্রটির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এসি মেশিন অকেজো। যার ফলে ভিতরটা অগ্নিকুণ্ড হয়ে থাকে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দর্শকদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই একজন সংস্কৃতি-প্রেমী মানুষ হিসেবে আমার অনুরোধ, প্রেক্ষাগৃহটির যথাযথ সংস্কার করে একজন দক্ষ প্রশাসকের মাধ্যমে যেন তদারকির ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু এই প্রেক্ষাগৃহটি একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তাই বিদ্যুতের বিল কমানোর জন্য এসি মেশিন অকেজো করে রাখা হয়, এ রকমই সন্দেহ অনেকের। সমস্ত বিষয়টি তদন্ত করে এবং সমস্যার সমাধানে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করি।
— জ্যোতি প্রসাদ রায়। উকিলপাড়া, জলপাইগুড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ub letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE