Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শিক্ষককে মারধরে অভিযুক্তেরা অধরাই, ফের তাণ্ডব পতিরামে

নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মারধর, হুমকির অভিযোগের পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তরা কেউ ধরা পড়েনি। উল্টে এ দিন শুক্রবার ফের বালুরঘাটের পতিরাম কলেজ চত্বরে চকলেট বোমা ফাটিয়ে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় আতঙ্কিত কলেজের শিক্ষকরা। এ দিন শিক্ষকরা প্রথমে পরীক্ষা নিতেও বেঁকে বসেন।

পুলিশ প্রহরায় পরীক্ষা পতিরাম কলেজে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ প্রহরায় পরীক্ষা পতিরাম কলেজে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মারধর, হুমকির অভিযোগের পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তরা কেউ ধরা পড়েনি। উল্টে এ দিন শুক্রবার ফের বালুরঘাটের পতিরাম কলেজ চত্বরে চকলেট বোমা ফাটিয়ে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় আতঙ্কিত কলেজের শিক্ষকরা। এ দিন শিক্ষকরা প্রথমে পরীক্ষা নিতেও বেঁকে বসেন। পরে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায় সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এই কলেজের ছাত্র সাংসদ টিএমসিপির দখলেই রয়েছে। বিরোধী সংগঠনগুলি কলেজে গোলমালের ঘটনায় টিএমসিপিকে অভিযুক্ত করেছে। যদিও শিক্ষককে মারধর, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় শিক্ষকদের আতঙ্ক কাটছে না। তৃণমূল নেতা ক্ষমা চাইলেই কী অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাবে, সে প্রশ্নও উঠেছে। এমনকি, এ দিন কলেজে চকলেট বোমা ফাটানোর অভিযোগে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে ধরেও ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এ দিনই ছিল কলেজে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষার শেষ দিন। তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় থাকা অভিযুক্ত ওই ছাত্রদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। নেতাদের চাপেই নিগৃহীত শিক্ষক থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার সাহস পাননি বলে তাদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে প্রবীরবাবুর যুক্তি, ‘‘অভিযুক্তরা কেউই টিএমসিপি-র নয়। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ করলে বড় গোলমাল হতে পারে ভেবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিছু ছাত্র নকল করতে দিতে হবে বলে অন্যায্য দাবি করে গুরুতর অন্যায় করেছে।’’ কিন্তু আপনি কেন ক্ষমা চাইতে গেলেন? প্রবীরবাবুর জবাব, ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে আমাকে শিক্ষকদের কাছে ছাত্রদের হয়ে ক্ষমা চাইতে হয়। আমি চেয়েছিলাম, পরীক্ষা যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়। না হলে অনেক ছাত্রের ক্ষতি হয়ে যেত।’’

গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে এ দিন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন সদস্যের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল কলেজে আসেন। সেই দলের প্রতিনিধি সিদ্ধার্থশঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেব। তিনি যা পদক্ষেপ করার করবেন।’’ ওই পর্যবেক্ষকেরা এ দিন কলেজে হাঙ্গামায় অভিযুক্ত ৪-৫ জনকে চিহ্নিত করেছেন বলে জানা গেলেও এ বিষয়ে সিদ্ধার্থবাবু মুখ খুলতে চাননি।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের এডুকেশনের দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার সময় নকল ধরে কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অমিত দাস এক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন। পাশাপাশি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল নকল ধরে ওই কলেজের ১২ জন ছাত্রছাত্রীর উত্তরপত্র বাতিল করে দেন বলে অভিযোগ। পরীক্ষা শেষ ঘণ্টা বাজার পরেও খাতা জমা না-দেওয়ায় নজরদার শিক্ষক অমিতবাবু এক ছাত্রীর খাতা কেড়ে নিতে গেলে বেঞ্চ থেকে তার জলের বোতল উল্টে গায়ে পড়ে যায় বলে অভিযোগ। সে সময় ছাত্রীর গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে একদল ছাত্র বিক্ষোভ শুরু করে বলে অভিযোগ। ওই নজরদার শিক্ষক অমিতবাবুকে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের একটি দল চড়াও হয়ে জামার কলার ধরে চড়, ঘুঁসি মেরে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেয়। বিক্ষোভে সামিল হন বেশ কিছু এমন ছাত্রও যাঁদের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গিয়ে সেদিনের মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই ছাত্রীও তাঁর গায়ে হাত দেওয়া হয়নি বলে জানালে তবে উত্তেজনা কমে।

ফের এ দিন কলেজে হাজির পুলিশের সামনেই চকোলেট বোমা ফাটানোর ঘটনা ঘটলে অন্য পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার প্রহৃত শিক্ষক অমিতবাবু অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জানালেও এদিন তিনি বলেন, ‘‘হামলাকারীদের চিনতে পারিনি। অধ্যক্ষকে সব জানিয়েছি।’’ পতিরাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বরূপ সাহা বলেন, ‘‘গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিশেষ পর্যবেক্ষক দল সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেছেন। কলেজের তরফেও উপাচার্যকে সব জানানো হয়েছে।’’

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, পতিরাম কলেজে এবার বালুরঘাট কলেজের দু’হাজারের উপরে ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার সিট পড়েছিল। ওই দুটি কলেজই বিরোধী শূন্য। অর্থাৎ ছাত্র সংসদের সমস্ত আসনই টিএমসিপি-র দখলে। পতিরাম কলেজের টিএমসিপি-র ছাত্র সংসদের ইউনিট সভাপতি সুমন দাস বলেন, ‘‘গোলমালে যুক্ত ছাত্ররা কেউ আমাদের সংসদের ছেলে নয়। এটা কলেজের কিছু বেপরোয়া, বখাটে ছেলেদের কাজ।’’

তবে এসএফআইয়ের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদক তাপস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের মদতেই কলেজে গণ টোকাটুকির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আটকানোর চেষ্টা হলেই শিক্ষকদের উপর হামলা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE