অপেক্ষা: বড়দিনের পসরা নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। নিজস্ব চিত্র
দশ দিনের মাথায় বড়দিন। কোচবিহার বাজারে সেই উৎসবের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেখানে ক্রেতাদেরই ছবি চোখে পড়ছে না। কেক, জামাকাপড়, ‘সান্তা’র পোশাক, লাল টুপি, মুখোশ সাজিয়ে অপেক্ষায় বিক্রেতারা। কিন্তু কেনার লোকই নেই।
উৎসবের বাজারের এই হাল কি অসমের চলতি পরিস্থিতির কারণে? সরাসরি কেউ কোনও উত্তর দিলেন না। তবে সকলেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যা জানালেন, তার মোদ্দা অর্থ দাঁড়ায়, প্রতিবেশী রাজ্যের ক্রেতারা তাঁদের উৎসবের বাজারের বড় একটা ভরসা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কোচবিহারের বাজারে অসমের ক্রেতারা ভিড় করেন। জমে ওঠে ব্যবসা। বিশেষ করে কেকের ব্যবসা। কিন্তু এবার কেকের বরাত নেই বললেই চলে।
কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নারায়ণ মোদক বলেন, “বড়দিনের ব্যবসা অনেকটা অসমের ক্রেতাদের আনাগোনার ওপর নির্ভর করে। এবার অসমে অশান্তির জন্য সেই ক্রেতাদেরই দেখা নেই। ফলে বড়দিনের মুখে জেলা জুড়ে ব্যবসা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”
ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রেই জানা গিয়েছে, নতুন জামাকাপড়, কেকে, সান্তা পোশাক, টুপি, ক্রিসমাস ট্রি, বৈদ্যুতিন আলোর সরঞ্জাম থেকে মোমবাতির মতো নানা সামগ্রী খুচরো বিক্রি হয়। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরাও অনেকে ওই সব অসমে রফতানি করেন। এবার কোনও ব্যবসাই জমছে না। কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, “গোটা ডিসেম্বরে কোচবিহারের বাজারে অসমের ক্রেতারাই প্রায় এক কোটি টাকার বড়দিনের নানা সামগ্রী কেনেন। এবার আর দশ দিন বাকি থাকলেও সিকিভাগ ব্যবসাও হয়নি।”
বড়দিনের ব্যবসার মন্দার কথা মানছেন কোচবিহারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি সম্পাদক উত্তম কুন্ডুও। যিনি নিজেও বড়দিনে প্রতি বছর ‘সান্তা’ সেজে শহরে নানা উপহার বিলি করে বেড়ান। উত্তম বলছিলেন, “সান্তার পোশাকের মতো নানা সামগ্রী আমার দোকানে তুলেছি। জামাকাপড়, শীতের পোশাকও অন্যবার ভাল বিক্রি হয়। অসমের ক্রেতারা আসেন। কিন্তু এবার সেভাবে বিক্রিই নেই। তাই চিন্তায় আছি।”
কোচবিহারের একটি বেকারি কারখানার কর্তা বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “বড়দিনের দু’সপ্তাহ আগে অর্ডারের হিড়িক পড়ে প্রতিবার। এবার এখন পর্যন্ত তেমন চাহিদা নেই।” কোচবিহারের একটি দোকানের মালিকের কথায়, এবার বাইরের ক্রেতাদের ভিড় নেই। তাই অর্ডার করার ঝুঁকি নিতে ভাবতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, অসমের অশান্তির আবহে কোচবিহারের অন্য ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত। বেসরকারি যাত্রী পরিবহণ পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় দৈনিক ২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ। আদার জোগান কমায় দাম বাড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। জেলার নানা আনাজ রফতানি প্রায় বন্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy