তদারকিতে সমর, পাশেই সুধারানি।-নিজস্ব চিত্র
তিনি যেতেন শহরে ভিক্ষে করতে। আর দুই ছেলেমেয়ে যেত স্কুলে, পড়াশোনা করতে।
ভিক্ষে চাইতেন তিনি এক কথা বলেই, ‘বাড়িতে ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের পড়ানোর জন্য আমাকে সাহায্য করুন।’ এ ভাবেই বাংলায় এমএ করেছেন সুধারানি সরকারের সন্তানরা। মেয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে রবীন্দ্রভারতী থেকে করেসপন্ডেন্স কোর্সে।
মঙ্গলবার সেই মেয়েরই বিয়ে দিলেন সুধারানি। তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়ে পাড়া-পড়শি আর বন্ধুজনেরা সেই বিয়েতে যেন আত্মীয়তার আলো জ্বেলে দিলেন।
সকালে এক পড়শির বাড়িতেই রান্নাবান্নার কাজ দেখাশোনা করছিলেন সুধারানি। তার ফাঁকেই জানাচ্ছিলেন, কী ভাবে গত তিরিশ বছর ধরে টেনে চলেছেন সংসার। স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন সুধারানির স্বামী। এক পথ দুর্ঘটনার পর থেকে ধীরে ধীরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তার পর থেকে সংসার চালাতে, ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে সুধারানি ভিক্ষে করেন।
এর মধ্যে বিয়ে দিয়েছেন বড় মেয়ে মামণি সরকারকে। তখন সেই মেয়ে কিন্তু সাবালিকা হয়নি। পরের মেয়ে নমিতা কিন্তু পড়তেই চেয়েছিল। ছেলে বিপুলও। তাই ভিক্ষে করেও পড়া চালিয়ে গিয়েছেন সুধারানি। এমনকী, মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধও এল এই ভাবেই।
সুধারানি জানালেন, তাঁর সঙ্গেই ভিক্ষে করেন আর এক প্রৌঢ়া। তিনিই খোঁজ দেন গোপাল রায়ের। কাছেই গ্যারাজে কাজ করেন গোপাল। মাধ্যমিক পাশ।
সন্ধ্যার লগ্নে বিয়ে। তার আগে দিনের বেলা সুধারানির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এলাহি ব্যাপার। আলিপুরদুয়ার জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সমর ভট্টাচার্য দলবল নিয়ে এসে পড়েছেন। হাত লাগিয়েছেন বিয়ের কাজে। এর আগে বিয়ের খরচ জোগাড়েও নেমে পড়েছিলেন সমরবাবুরা। এ দিন বললেন, ‘‘ভিক্ষে করে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন উনি। এমন তো সচরাচর চোখে পড়ে না। তাই চলে এলাম, যদি কিছু কাজে লাগি ওঁদের।’’
বিয়েতে খাওয়া-দাওয়ারও ভালই ব্যবস্থা হয়েছে। বেগুন ভাজা, ডাল মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট, রুই, ট্যাংরার ঝোল, চাটনি এবং রসগোল্লা। নিমন্ত্রিত প্রায় চারশো।
কাণ্ড দেখে আপ্লুত পাত্রী নমিতা। বললেন, ‘‘এত এলাহি আয়োজন হবে, ভাবতেও পারিনি।’’ মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল তাঁর। বললেন, ‘‘বিয়ের পরে সাধ্যমতো গরিব ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে পড়াব। যাতে তারাও আমাদের মতোই লেখাপড়া শেখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy