মেখলিগঞ্জে জখম বিজেপি কর্মী।
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে যৌথ মঞ্চের ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শুরুর মুখেই একই দাবিতে সোমবার ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালন করল বিজেপি। সেই বন্ধককে ঘিরে সংঘর্ষের জেরে জখম হলেন ১৮ জন। আজ, মঙ্গলবার এবং বুধবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলা, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ মহকুমা এবং উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের সমস্ত চা বাগানে বন্ধের ডাক দিয়েছে চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ। ১২ নভেম্বর ওই সমস্ত এলাকায় ১২ ঘন্টা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে মেখলিগঞ্জ থানার চ্যাংরাবান্ধার দেবী কলোনিতে কোচবিহার-শিলিগুড়ি রাজ্য সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন বিজেপি সমর্থকরা। অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূল পাল্টা মিছিল নিয়ে গিয়ে বিজেপি সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়। দুই পক্ষ গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। বিজেপির দাবি, তাঁদের চার জন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুবোধ সরকার নামে একজনের মাথা ফেটে গিয়েছে। তাঁকে মেখলিগঞ্জ ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাঁদের ১৫ জন কর্মী জখম হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাত জনকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং বাকিদের শিলিগুড়িতে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, “বিজেপি কর্মীরা পরিকল্পিত ভাবে গণ্ডগোল করে আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা করেছে। এটা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।”
তৃণমূলের মেখলিগঞ্জ ব্লকের সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকার বলেন, “আমাদের কেউ বন্ধ রুখতে যাননি। যাঁদের মারধর করা হয়েছে, তাঁদের বাড়ি চৌরঙ্গী এলাকায়। প্রতিদিনের মতো তাঁরা চ্যাংরাবান্ধা বাজারে যাচ্ছিলেন। সেই সময় হামলা করে বিজেপি।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপরে হামলা করেছে তৃণমূল। দলের মেখলিগঞ্জ ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবীরাম রায় বলেন, “আমাদের কর্মীরা পিকেটিং করছিলেন। সেই সময় তৃণমূল মিছিল নিয়ে গিয়ে হামলা চালায়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা হলে ফের রাস্তায় নামব।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ বিজেপি কর্মীরা বনধ করার চেষ্টা করছিল। তা নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।”
এদিকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দু’দিনের কর্মসূচি নিয়ে সোমবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে যৌথমঞ্চ। মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক অভিজিত্ মজুমদার বলেন, “২৭২ টি বাগানে বন্ধ ডাকা হয়েছে। সকাল ৬ টা থেকে ১২ ঘন্টার সাধারণ ধর্মঘটও ডাকা হয়েছে।” এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে সিটুর তরফে সমন পাঠক, ইউটিইউসি’র নেতা বিনয় চক্রবর্তী, এবং প্রগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিকদের যৌথ কমিটির নেতা সিটুর জিয়াউর আলম জানান, মূলত বেতন সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে অসন্তোষের কারণে দু’দিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তিনি জানান, তাঁদের একমাত্র দাবি মজুরি বৃদ্ধি। দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বসে শ্রমিকের মজুরি নিয়ে দর-কষাকষির আর প্রয়োজন নেই। শ্রমিকের ন্যূনতম বেতনের ব্যাপারে একটি কেন্দ্রীয় আইন রয়েছে - ‘ন্যূনতম মজুরি আইন, ১৯৪৮’। সেই আইন মেনেই ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে শ্রমিকদের। অন্য কোনও চুক্তি মানা হবে না। ইতিমধ্যেই মজুরি চুক্তি নিয়ে পাঁচটি বৈঠক হয়েছে। মালিকপক্ষ, শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে নিয়ে। অথচ মজুরি নিয়ে নিষ্পত্তি হয়নি। শেষ বৈঠক হয় ৮ অগস্ট।
১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার রায়ে জানিয়েছিল দেশের মজুরি আইন মেনেই শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি স্থির করতে হবে। যদি তা না করা যায়, শিল্প চালাবার অধিকার থাকা উচিত নয়। গত ১৩ অক্টোবর গুয়াহাটিতে চা-শিল্প নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। সেই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। সেই বৈঠকেও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায় মেনে নেওয়ার কথা বলেন। নচেত্, চা-বাগান চালানোর লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে আসেন তিনি। শ্রমিক নেতা চিত্ত দে বলেন, “কিন্তু এ রাজ্যের শিল্প মন্ত্রী মলয় ঘটক কেন্দ্রীয় সুপারিশ মানতে রাজিই নন। তিনি অগস্ট মাসের ৮ তারিখ শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় বৈঠক করে শ্রমিকদের আশ্বাস দেন, বর্তমান মজুরি অনেকটা বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি নিজে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, মালিকদের যৌথ সংগঠন কনসালটেটিভ কমিটি অন প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়ে দিয়েছে, তারা আগামী তিন বছর অতিরিক্ত ১২ টাকা হারে মজুরি বাড়াতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে সোমবার রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “৯১ সালের আদালতের রায় মানার আগ্রহ তো বাম আমলে দেখা যায়নি। আমরা মানতে চাইছি। তাতে সময় লাগে। তার আগে শান্তি বজায় রেখে চুক্তি করাতে চাইছিলাম। এই চুক্তি না হলে যেমন সবচেয়ে অসুবিধা শ্রমিকদের, তেমনই চুক্তি হয়ে গেলে নেতাদের অসুবিধা। হাতে ইস্যু থাকবে না। তাই ধর্মঘট ডেকে সব বানচাল করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy