কাজ শুরু হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে ছ’মাস। বাস্তুকারদের দাবি, ৩৬ কোটি টাকার পানীয় জল প্রকল্প তৈরির কাজের প্রায় তিরিশ শতাংশ শেষ। বুধবার ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করে ভোটের রাজনীতি করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পুরসভার বিরুদ্ধে। শান্তিবন এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের এক বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য। বিরোধীদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়ার পর অন্তত তিন বছর পুরসভা কোনও কাজ করেনি। টাকা ব্যাঙ্কে ফেলে রাখা হয়েছিল। এখন শিলান্যাস করে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে তৃণমূল।
চেয়ারম্যান দীপকবাবুর যুক্তি, “ওই কাজে একটু দেরি হয়েছে। টাকা ফিরে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। সেই অবস্থায় আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেই। দায়িত্ব নিয়েই কাজ শুরু করেছি। প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক থাকায় সে সময়ে শিলান্যাস করা হয়নি। আজ সেটা করা হয়েছে। বিরোধী বা শাসকদল, সব কাউন্সিলরকে নিয়েই আমি ওই শিলান্যাস করেছি। রাজনীতির অভিযোগ ঠিক নয়।”
বিজেপির কোচবিহার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে-র অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার গাফিলতির জন্যেই বরাদ্দ পাওয়ার পরে তিন বছর কেটে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। পানীয় জল নিয়ে কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে শহরবাসীতে। এই সময় শিলান্যাস করে ভোট পাওয়ার ছক কষছে তাঁরা। বছরের পর বছর কেন ওই টাকা ফেলে রাখা হল, তার জবাব চাইব।” নিখিলবাবুর আরও অভিযোগ, প্রকল্পের টাকা নিয়েও অনিয়ম হয়েছে। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বহু টাকার পাইপ কেনা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। সব খরচের হিসেব চেয়ে প্রচার শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা বলেন, “শহরে দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্ট চলছে। কোনও কারণে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা বহুদিন ওই প্রকল্পের কাজ করেনি। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজে গতি এনেছেন। ওই কাজ অনেকটা হয়েও গিয়েছে। কিন্তু ভোটের মুখে কেন শিলান্যাস করা হল, তা আমরা জানতে চেয়েছি।”
অথচ শহরে পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। পুরসভা সূত্রের খবর, পুর-এলাকায় বর্তমানে ২০টি পাম্প হাউস রয়েছে, জলাধার রয়েছে তিনটি। প্রায় ১৫ হাজার বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার জলের সংযোগ বেড়েছে। জনসংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রতিদিন কোনও না কোনও এলাকায় জল নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। বাড়িতে সংযোগ থাকলে ঠিকমতো জল পাওয়া যায় না। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা এখনও বাড়িতে সংযোগ পাননি।
প্রায় তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সে সময় পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন বীরেন কুণ্ডু। পুরসভার হাতেও ওই প্রকল্পের জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। সে সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি বলে অভিযোগ। বিরোধীদের দাবি, কয়েক কোটি টাকার পাইপ কিনে পুরসভায় ফেলে রাখা হয়। তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সে সময়ে পুর-কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, নিয়ম মেনে ওই কাজ করতে গেলে একটু সময়ের প্রয়োজন। সে জন্যেই সময় লেগেছে। বীরেনবাবুর মৃত্যুর পরে অগস্টে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান দীপকবাবু। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকেই কোচবিহারের শান্তিবন এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিন প্রকল্পের শিলান্যাস করল পুর-কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy