Advertisement
১৬ মে ২০২৪

দমকল-বিধি মানতে উদ্যোগী হোটেল কর্তারা

শিলিগুড়ির হোটেলগুলিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, দমকলের বিধি নিষেধ যথাযথ মানার ক্ষেত্রে নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের সচেতন করতে উদ্যোগী গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সাধারণ সভা ডেকে সমস্ত হোটেল মালিকদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে চায় তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

শিলিগুড়ির হোটেলগুলিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, দমকলের বিধি নিষেধ যথাযথ মানার ক্ষেত্রে নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের সচেতন করতে উদ্যোগী গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সাধারণ সভা ডেকে সমস্ত হোটেল মালিকদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে চায় তারা। সচেতনতামূলক একটি কর্মশালা করার কথাও ভাবা হয়েছে। শহরে দুই শতাধিক হোটেল রয়েছে। তাদের নিয়ে কর্মসূচি করা হবে। সে ব্যাপারে দমকলের সহযোগিতাও চেয়েছেন হোটেল মালিক সংগঠনের কর্মকর্তারা।

শহরের হোটেলগুলির একাংশে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ নয় বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও অগ্নি কাণ্ডের সময় কী ভাবে তা ব্যবহার করতে হবে হোটেল কর্মীদের অধিকাংশই সে ব্যাপারে কিছু জানেন না। প্রধাননগরে হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা স্পষ্ট হয়েছে। দমকলের তরফে হোটেলগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রশিক্ষণ নেওয়াও বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া হোটেলের কর্মীদের অনেকেই কয়েক মাস পর কাজ ছেড়ে দেন। নতুন কর্মী আসেন। সে কারণে তিন মাস অন্তর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ব্যবহারের খুঁটিনাটি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। বাস্তবে সেই কাজ যে খাতায় কলমে হয় মাত্র তা হোটেল মালিকদের একাংশই স্বীকার করেছেন। সংগঠন তাই এ ব্যাপারে বিভিন্ন হোটেল মালিক-কর্মীদের সচেতন করতে উদ্যোগী হতে চান।

গত শনিবার গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা একপ্রস্ত আলোচনা করে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

হোটেল মালিকদের ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ব্যবহার যথাযথ ভাবে শেখাতে কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যারা প্রশিক্ষণ দেন অনেক ক্ষেত্রেই তা নিয়ে সমস্যা থাকে। আবার হোটেলের পুরনো কর্মীরা চলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই নতুন কর্মী আসেন। ওই নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। সে কারণে বিষয়টি অবহেলা না করে হোটেল মালিকেরা যাতে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন সে ব্যাপারে সচেতন করা হবে। মালিকপক্ষ সচেতন না হলে তাদেরও বিপদে পড়তে হবে।”

প্রধাননগরের ঘটনার পরও পুরসভা, দমকল বা পুলিশ, প্রশাসন হোটেলের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, আগুন লাগলে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পরিকাঠামো যথাযথ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে এখনও তত্‌পর হয়নি। অথচ ওই কাজ যে অবিলম্বে করা দরকার সে ব্যাপারে একমত শহরের বাসিন্দা, পর্যটক থেকে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারাও। প্রধাননগরের বাসিন্দাদের একাংশ এ ব্যাপারে সরব হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখতে পুরসভা বা দমকলের তরফে এখনও উদ্যোগ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব হোটেল মালিক সংগঠন, দমকল, প্রশাসনকে নিয়ে শীঘ্রই এ ব্যাপারে বৈঠকে বসতে চান বলে জানিয়েছেন।

পুরসভা থেকে হোটেলগুলিকে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে দমকল, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ বিভিন্ন দফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়। এ ব্যাপারে কড়াকড়িও রয়েছে। অথচ হোটেলগুলির একাংশ ট্রেড লাইসেন্স অনেক ক্ষেত্রে নবিকরণ করছে না বলে অভিযোগ। দমকলের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা ডিভিশনাল অফিসার সনত্‌ কুমার মণ্ডল বলেন, “আমরা চাই হোটেলগুলিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ হোক। সে ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের সমস্ত সাহায্য করাও হয়। মালিক সংগঠনের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন। আমাদের দিক থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই সাহায্য করব।” দমকলের তরফেও অভিযানে নামার কথা জানানো হয়েছে। কোনও হোটেলের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে াইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

প্রধাননগরের যে হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ দুই বছর ট্রেড লাইসেন্স নবিকরণ করেননি বলে প্রাথমিক তদন্তে পুর কর্তৃপক্ষ জানতে পারেছেন। দমকল সূত্রেই জানা গিয়েছে, তাদের ছাড়পত্র নিতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে কি না তা দেখাতে হয়। তার মধ্যে হোটেলের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও রয়েছে। দমকলের অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে যারা হোটেলগুলিতে কর্মীদের ওই প্রশিক্ষণ দেন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও কোনও হোটেলের কর্মীরা বুঝতে না পারলে কর্তৃপক্ষ দমকল বিভাগে জানাবেন। সে ক্ষেত্রে দমকলের তরফে তাঁদের ফের বোঝানোর ব্যবস্থাও করা হয়। ৩ মাস অন্তর প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি নথিভুক্ত করতে হোটেলে আলাদা ‘রেজিস্ট্রার’ খাতাও থাকার কথা। ছাড়পত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা যে নিয়মগুলি মানছেন সে ব্যাপারে ‘সেল্ফ ডিকলেয়ারেশন’ দিতে হয়। তা ছাড়া হোটেলে ভূগর্ভস্থ জলাধার, ওভারহেড জলাধার, বহুতল হোটেলে ওঠানামার জন্য একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা থাকা জরুরি। অথচ কার্যক্ষেত্রে তা যে দেখা হয় না তা স্বীকার করেন মালিকদের অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE