Advertisement
০৪ মে ২০২৪
“এখন ভোট আসছে বলে এসেছেন, ও সব বুঝি”

নিজে সাফাইয়ে নেমে বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে মন্ত্রী

শহরের গলি রাস্তায় কোদাল হাতে নিয়ে নর্দমা সাফ করতে শুরু করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তার এই কাজ ‘লোক দেখানো’ বলে তাঁকেই অভিযোগ করলেন এলাকার একাধিক বাসিন্দা। তাঁদের সঙ্গে কার্যত একপ্রস্ত ‘তর্ক’ই হয়ে গেল মন্ত্রীর। ঘটনাস্থল শিলিগুড়ি শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড। বেলা ১০টা নাগাদ পুরসভা এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে মন্ত্রী ওই এলাকার সাফাই পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে যান। এর পরে হঠাত্‌ হরিমন্দির রোড এলাকায় মন্ত্রী নিজেই কোদাল হাতে নিয়ে নর্দমা সাফাই শুরু করেন।

নিজেই কোদাল হাতে তুলে নিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

নিজেই কোদাল হাতে তুলে নিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

শহরের গলি রাস্তায় কোদাল হাতে নিয়ে নর্দমা সাফ করতে শুরু করেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তার এই কাজ ‘লোক দেখানো’ বলে তাঁকেই অভিযোগ করলেন এলাকার একাধিক বাসিন্দা। তাঁদের সঙ্গে কার্যত একপ্রস্ত ‘তর্ক’ই হয়ে গেল মন্ত্রীর।

ঘটনাস্থল শিলিগুড়ি শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড। বেলা ১০টা নাগাদ পুরসভা এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে মন্ত্রী ওই এলাকার সাফাই পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে যান। এর পরে হঠাত্‌ হরিমন্দির রোড এলাকায় মন্ত্রী নিজেই কোদাল হাতে নিয়ে নর্দমা সাফাই শুরু করেন।

রাস্তার ধারে বাড়ি থেকে ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছেন মহিলারা। তাঁদের মধ্যে বিনা ঘোষ, বিভা ঘোষরা বলেন, “এ সব করবেন না। ও সব লোক দেখানো কাজ আমরা বুঝি। দু বছর ধরে কেউ তো আসেননি। এখন ভোট আসছে বলে এসেছেন। দুর্গন্ধে আমরা সারা বছর থাকতে পারি না। এখন আপনি এসেছেন? কাজ করবেন বলছেন। ভোট শেষ হলে কাজও শেষ। আমরা বুঝি।” মন্ত্রী তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “আপনারা বলছেন বলুন। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।”

আরেক বাসিন্দা হরিহর ঘোষ বলেন ওঠেন, “আপনি মন্ত্রী হয়ে এ ভাবে নর্দমা পরিষ্কার করবেন না। আপনি আমাদের লজ্জা দিচ্ছেন। আমরা প্রতিদিন ওই কাজ করছি। পুরসভা সাফাই করে না বলে আমাদের করতে হয়। আপনি কেন করছেন। আমাদের লজ্জা হচ্ছে।” মন্ত্রী হাতের কোদাল নামিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যান। মন্ত্রী, “কে আপনি? কী বলতে চাইছেন?” হরিহরবাবু, “আপনি নর্দমায় নামলে আমাদের লজ্জা। আপনার এই কাজ করার তো কথা নয়। এলাকায় সাফাই হয় না। বারবার বলা হলেও হয়নি।” মন্ত্রী বলেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন। সে জন্যই তো এসেছি। বছরের পর বছর পরিষ্কার হয়নি। যাতে পরিষ্কার করা হয় সেই ব্যবস্থা করতে এসেছি।”

বস্তুত, ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় সাফাই পরিষেবা দেখতে বেরিয়ে সোমবার নিজের শহরেই এ ভাবে বাসিন্দাদের নানা প্রশ্ন, ক্ষোভের মুখে পড়েন গৌতমবাবু দেব। নিজে সাফাই করতে নেমে বাসিন্দাদের প্রতিবাদের মুখেও পড়তে হল। দিনের পর দিন নিকাশি সাফাই না হওয়ার জেরেই মন্ত্রী এ ভাবে ক্ষোভের মুখে পড়েন বলে অনুমান বাসিন্দাদের একাংশের।


এক ব্যক্তির মন্তব্যের জবাব দিচ্ছেন মন্ত্রী।

গৌতমবাবু পরে বলেন, “বাসিন্দাদের ক্ষোভ থাকতেই পারে। এই পরিস্থিতি এক দিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। গত সাড়ে ৪ বছরে পরিষেবা আরও খারাপ হয়েছে। অনেক জায়গায় নর্দমার জল বার হওয়ার রাস্তা নেই। অনেকে নর্দমা আটকে যাতায়াতের কালভার্ট বানিয়েছেন। নিকাশির হার ফেরাতে মাস্টার প্ল্যান করে কাজ করতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে হবে। সেই কাজ হতে সময় লাগবে। আপাতত কাল থেকেই পুরকর্মীরা বন্ধ নিকাশির জল বার করার রাস্তা করে, আবর্জনা সাফাই করবেন।” বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে বিব্রত হন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি সঙ্গে থাকা পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়াকে এলাকার সাফাই পরিষেরা উপর গুরুত্ব দিতে বলেন। যেখানে নিকাশি বন্ধ হয়ে রয়েছে তা কেটে জল যাওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। কয়লাডিপো, ঘোষপাড়া, যাদবপল্লি, নয়াবাজার এলাকার একাংশ ঘুরে দেখেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অক্টোবর মাসে ৩৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার যে তথ্য মিলেছিল সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। সেই মতো ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “এ বছর জানুয়ারি থেকে শিলিগুড়ি শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ জন। ৫, ৬,৭, ৮, ৯, ৩১-সহ ১২ টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি ছিল। ওই মুহূর্তে নার্সিংহোমগুলিতে ৩ জন ভর্তি রয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে কেউ নেই। রোগ প্রতিরোধে পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর কাজ করছে।”

যদিও এ দিন বিকালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গানগরের বাসিন্দা সঞ্জয় খাতি (১৪) নামে এক কিশোরের দেহে ডেঙ্গির জীবাণু থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়েছি। তার শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু রয়েছে বলে চিকিত্‌সকরা মনে করছেন। অথচ এনসেফ্যালাইটিস, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam deb uttarbanga soumitra kundu siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE