নাগরিক সম্মেলনে মন্ত্রী।
তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। আবার একাধিক সরকারি পদেও রয়েছেন। দলেরও গুরুদায়িত্ব পালন করেন। সেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব যদি নিজের বাড়ির এলাকার বাইরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন পাড়ার দরকারে তাঁর দেখা মিলবে কি না সেই প্রশ্ন উঠল নাগরিক সম্মেলনে। রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়ায় উদয়ন সমিতির মাঠে মঞ্চ বেঁধে ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানেই হাকিমপাড়ার বাসিন্দাদের তরফে সুকুমার ভাদুড়ী ওই প্রশ্ন করেন। তাঁর প্রশ্ন, “আপনি আমাদের এলাকার কাউন্সিলর হলে আপনাকে কী প্রয়োজনে পাব? যেমন, দরকার পড়লে কাউন্সিলরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারি, কথা বলতে পারি, আপনি কী তেমন সময় দেবেন?”
যা শোনার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দাবি, অবশ্যই তিনি সময় দেবেন। মন্ত্রীর যুক্তি, “আমি ১৭ নম্বর এয়ার্ডে কাউন্সিলর থেকেই মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। ওয়ার্ডের সকলকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, আমাকে দরকারে পাওয়া যায় কি না? ওই ওয়ার্ডে উন্নয়নে কোনও ঘাটতি হয়েছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তা ছাড়া মনে রাখবেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য অরূপ রায় ও ফিরহাদ হাকিমও কাউন্সিলর। তাঁরা মন্ত্রিত্ব সামলে কাউন্সিলরের কাজ করেন।”
মন্ত্রীর আশ্বাস শুনলেও বাস্তবে কী হবে তা নিয়ে অবশ্য সংশয়বাদী নাগরিকদের অনেকের মধ্যে আলোচনা চলছেই। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, গৌতমবাবু মন্ত্রী তো বটেই, উপরন্তু, এসজেডিএ, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বে রয়েছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানদের দায়িত্বও সামলাতে হয় তাঁকে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছাড়াও দলের রাজ্যের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবেও নিয়মিত কলকাতা যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। জয়গাঁ, ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, কোচবিহার ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের কাজকর্মের অনেকটাই মন্ত্রীর উপরে নির্ভরশীল। উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় ছাড়াও শিলিগুড়ি পুরসভা, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কাজকর্ম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তাও নিয়মিত তদারকি করতে দেখা যায় মন্ত্রীকে। একজনের কাঁধে এত দায়িত্ব বলেই তা নিয়ে জনমানসে নানা প্রশ্ন, বিতর্ক চলছেই।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই বিকেলে শহরের আরেক প্রান্তে নাগরিক কনভেনশনে উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মন্ত্রীকে। এলাকার তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলরের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর কাছেই এ দিন বিষোদগার করেন এক ব্যক্তি। শিলিগুড়ির রেলওয়ে ইন্সস্টিটিউটের হলে এ দিন বিকেলে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মন্ত্রীর কাছে নিকাশি সমস্যা, শহরের যানজট সমস্যা, রাস্তাঘাটের সমস্যা নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। শেষ পর্বে নিজেকে ৩৩ নম্বর এলাকার বাসিন্দা তথা সব্জি বিক্রেতা পরিচয় দিয়ে মানিক রায় বলেন, “গেট বাজার এলাকায় সেখানে আমরা ব্যবসা করি সেখানকার নিকাশি নালার বেহাল অবস্থা। কাউন্সিলরকে বারবার বলেছিলাম। তিনি কিছুই করেননি। আপনি একটু দেখবেন।” এ ছাড়াও রাজাহোলি এলাকা, রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও বাসিন্দারা প্রশ্ন তোলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মানিকবাবুর বিষোদগারের কোনএও উত্তর অবশ্য দেননি। সমস্যা প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে নিকাশির সমস্যা গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। জোন ভাগ করে নিকাশি ধরে কাজ করতে হবে। গোটা শহরের নিকাশির হাল ফেরাতে প্রচুর অর্থ দরকার। তা ছাড়া ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই শহরে ভুগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।” ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সমীরণ সূত্রধর বরো কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ওই প্রশ্ন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কোন নিকাশির কথা ওই বাসিন্দা বলেছেন তা পরিষ্কার নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy