মেয়র সপার্ষদে ইস্তফা দেওয়ার পরে সপ্তাহ গড়াতে চলেছে। গত ২০ মে মেয়রের ইস্তফার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানান পুর কমিশনার। কিন্তু, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন মেয়র নির্বাচন কিংবা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে রয়েছে তা পুরসভার কাছে স্পষ্ট নয়। অথচ পুরসভার দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতেই হবে। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত নানা সংস্থা, ঠিকাদারদের টাকাও মিটিয়ে দিতে হবে। উপরন্তু, বকেয়াও পাহাড় প্রমাণ। তাই শিলিগুড়ি পুরসভার অফিসার-কর্মীদের রাতের ঘুম কার্যত উবে গিয়েছে। কারণ, টাকা না দিতে পারলে সাফাই থেকে পানীয় জল সরবরাহ, পথবাতি থেকে বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিল, সাফাই এবং পূর্ত বিভাগের গাড়ি ভাড়া, ঠিকাদারদের পাওনা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে অন্তত ২২ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা মেটাতে হবে। ওই বকেয়া মেটাবেন না পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দেবেন তা নিয়েই হিমসিম খেতে হচ্ছে পুর কমিশনার থেকে অর্থ বিভাগের আধিকারিকদের।
বকেয়া-জট। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
প্রকল্পের খাতে যে টাকা পড়ে রয়েছে তা অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে না। পুরসভা তহবিলে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্প খাতে ২৮ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। ফোর জি পরিষেবার কেবল পাতার কাজের অনুমতি পেতে একটি সংস্থা ৬ কোটি টাকা দিয়েছে। সেটি তহবিলে পড়ে থাকলেও ওই কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুরসভারই একটি সূত্রে পাওয়া হিসাব বলছে, সাফাই পরিষেবার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক, ট্রাক্টর, ডাম্পারের মতো গাড়ি ভাড়ার খরচ গত জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় ২ কোটি বাকি পড়ে রয়েছে। গাড়ির মালিকেরা ইতিমধ্যেই পুরসভার এসে হুমকি দিয়েছেন পাওনা টাকার একটা বড় অংশ এখনই না মেটানো হলে তাঁরা গাড়ি চালানো বন্ধ রাখবেন। পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তাদের ১ মাসের মতো বকেয়া ৩১ লক্ষ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। তাঁরা প্রথমে নিতে অস্বীকার করেন। পরে অনেক বোঝানোর পর শুক্রবার তাঁদের হাতে চেক তুলে দিতে পেরেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশি দিন যে এ ভাবে ঠেকা দেওয়া যাবে না তা তাঁরাও জানেন। মঙ্গলবার তা নিয়ে বৈঠকে বসেন পুর কমিশনার এবং সাফাই বিভাগের অন্যান্য আধিকারিকরা।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পানীয় জল সরবরাহের পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কাছে পুরসভার বাকি পড়ে রয়েছে ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। পথবাতির বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া পড়ে রয়েছে আরও ১ কোটিা। এই টাকা না দিলে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা যে কোনও সময় সংযোগ কেটে দিতে পারেন। তা জানালে পুর কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করায় তারা এখনও সহানূভূতি দিয়ে দেখেছেন বিষয়টি। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা মেটানো না হওয়ায় বকেয়া রয়ে গিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পরিষেবার যাতে ব্যহত না হয় তা দেখতে।”
পুরসভা এখন অভিভাবকহীন, এমন একটা ধারনা নানা মহলে তৈরি হওয়ায় রাতারাতি শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিনই পুরসভায় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ আসছে। পুর কমিশনার বলেন, “অবৈধ নির্মাণ নিয়ে এর মধ্যে অনেকগুলি অভিযোগ আসছে এটা ঠিক। দ্রুত অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সরকারের অনুমতি নিয়ে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy