Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
হেমতাবাদ

মাটির নীচে বালকের হাড়গোড়, ধৃত সত্‌মা

সম্পত্তির লোভে ৮ বছরের বালককে খুন করে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সত্‌মা-র বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার ধোয়ারই এলাকায়।

হেমতাবাদে উদ্ধার হচ্ছে হাড়গোড়।

হেমতাবাদে উদ্ধার হচ্ছে হাড়গোড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

সম্পত্তির লোভে ৮ বছরের বালককে খুন করে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সত্‌মা-র বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার ধোয়ারই এলাকায়।

পড়শিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এ দিন হেমতাবাদের বিডিওর উপস্থিতিতে পুলিশ অভিযুক্ত মহিলার শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরের মাটি খুঁড়ে প্রায় ৫ ফুট নিচ থেকে ওই বালকের হাড়গোড় উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ইমরান হাসান। সে স্থানীয় কমলাবাড়ি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই বালক নিখোঁজ ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ইমরানকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত ওই মহিলার একার পক্ষে ওই বালককে খুন করে পুঁতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে পুলিশের দাবি।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, “স্বামীর সম্পত্তির লোভে অভিযুক্ত ওই মহিলা তার সত্‌ ছেলেকে খুন করে বাড়ির রান্নাঘরে পুঁতে দিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তিনি জানান, অভিযুক্ত ওই মহিলা বর্তমানে তার স্বামীর সঙ্গে দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করতে গিয়েছেন। অভিযুক্তের স্বামীর সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ রেখেছে। শীঘ্রই পুলিশের দল একটি দিল্লিতে গিয়ে অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করবে। হেমতাবাদ থানার ওসি মন্টু বর্মন জানান, ওই বালককে কবে ও কীভাবে খুন করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে মৃতের হাড়গোড় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগে পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ওই মহিলার নাম জাহানুর খাতুন। খালিকুল ইসলাম। জাহানুর খালিকুলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রায় ছয় বছর আগে স্থানীয় সমাসপুর এলাকার বাসিন্দা খালিকুলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মর্জিনা বিবি স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক বিবাদের জেরে স্থানীয় প্রতিবেশি ব্যক্তিকে বিয়ে করে দিল্লিতে চলে যান। ইমরান ছাড়াও মর্জিনার ১৭ ও ১৫ বছর বয়সী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কিছুদিন পরে তারাও বাবা খালিকুলের সঙ্গে গোলমাল করে এক হেমতাবাদ এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। পরিস্থিতিতে খালিকুল ছেলে ইমরানকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। ছেলের দেখাশোনার জন্য প্রায় সাড়ে চার বছর আগে খালিকুল রায়গঞ্জের গোমর্ধা এলাকার বাসিন্দা জাহানুরকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই জাহানুর সত্‌ ছেলে ইমরানকে ঠিকমতো দেখাশোনা না করার অভিযোগে খালিকুলের সঙ্গে জাহানুরের গোলমাল শুরু হয়।

এই পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল আচমকাই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ইমরান। খালিকুল বহু খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে তাঁর সন্দেহের তির গিয়ে পড়ে জাহানুরের উপরে। পর দিন খালিকুল দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জাহানুর ও শ্যালিকা মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে হেমতাবাদ থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ২৫ এপ্রিল জাহানুরকে গ্রেফতার করে। মর্জিনা পালিয়ে যায়। প্রায় দেড় মাস জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে ছাড়া পায় জাহানুর। কিন্তু পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। খালিকুল অবশ্য হাল ছাড়েননি। ছেলেকে খুঁজে পেতে তিনি জাহানুরের সঙ্গে সুসম্পর্কের অভিনয় শুরু করেন।

প্রায় এক মাস আগে খালিকুল বেড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে জাহানুরকে নিয়ে দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করতে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর খালিকুল জাহানুরের সঙ্গে গল্প জুড়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে ছেলে কোথায় তা জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু জাহানুর তাঁকে কিছু না জানানোয় বুধবার তার উপর চাপ সৃষ্টি করেন খালিকুল। চাপের মুখে ভেঙে পড়ে এর পর জাহানুর ইমরানকে খুন করে বাড়ির রান্নাঘরে পুঁতে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন।

রায়গঞ্জের ডিএসপি নারায়ণ মজুমদার জানান, এদিন সকালে খালিকুল প্রতিবেশীদের ফোন করে বিষয়টি জানান। পড়শিরা পুলিশকে খবর দেন। খালিকুলের বাবা মহম্মদ মইনুদ্দিন বলেন, “ছেলে বসতভিটে ও ৫ বিঘা জমি ভবিষ্যতে ইমরানের নামে লিখে দিতে পারে, সেই আশঙ্কার জাহানুর মাঝেমধ্যেই ছেলের সঙ্গে গোলমাল করত। এমনকী, তার নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য জাহানুর খালিকুলের উপর নিয়মিত চাপ সৃষ্টিও করত। তাই সম্পত্তির লোভেই জাহানুর ইমরানকে খুন করে পুঁতে দিয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

hemtabad murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE