ভস্মীভূত বিদ্যানন্দপুর।
রান্নাঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে ভস্মীভূত একটি গোটা গ্রাম। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় এক শিশু-সহ বৃদ্ধার। পুড়ে গিয়েছে ২০০টির বেশি গবাদি পশু। আগুনে গুরুতর জখম এক মহিলা সহ ৮ জন। বুধবার দুপুরে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বরুই পঞ্চায়েতের বিদ্যানন্দপুরে। দমকল পৌঁছনোর আগে প্রবল হাওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পাকা ও কাঁচা মিলিয়ে ২০০টি বাড়ি। ঘটনার পরেই এলাকায় যান মহকুমা, ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা।
পুলিশ জানায়, মৃত দু’জনের নাম স্বরূপজান বেওয়া (৮০) ও দিল মহম্মদ (৪)। আগুন নেভাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন লাগোয়া পাঁচলা এলাকার যুবক মাসেরুল হক। তাঁকে চাঁচল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরাও সেখানে ভর্তি। অগ্নিকাণ্ডের দেড় ঘণ্টা পরে চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে দমকলের ৩টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায় বলে অভিযোগ। আগুনে সর্বস্ব খুইয়ে খোলা আকাশের নীচে ২০০ পরিবারের আটশো বাসিন্দা।
দিল মহম্মদে মা শোকার্ত দুলালি বিবিকে সামলাচ্ছে পরিজনেরা।
চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “প্রশাসনের তরফে দুর্গতদের রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ত্রাণের ত্রিপল, পোশাক রাতের মধ্যেই দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এলাকার বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। রাতে ওই এলাকায় জেনারেটরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
নীয় এক বাসিন্দার রান্নাঘরে প্রথমে আগুন লাগে। প্রবল হাওয়ায় তা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে লম্বালম্বি ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িই দেওয়াল পাকা ও টিনের ছাদ। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কিছু মাটির বাড়িও। অধিকাংশ কৃষিজীবী ও দিনমজুর। পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, বাড়ি পুড়তে দেখে ঘরে বাক্সে রাখা চার হাজার টাকা নিতে ঢুকেছিলেন দুলালি বিবি। স্বামী মহম্মদ দুলাল গিয়েছিলেন চাঁচল হাটে। ওই সময় একমাত্র সন্তান দিল মহম্মদকে বাড়ির সামনে রেখে ঘরে ঢোকেন তিনি। মাকে দেখে মহম্মদ ঘরে ঢুকে পড়ে। দুলালি বিবি বেরোতে পারলেও পুড়ে মৃত্যু হয় মহম্মদের। স্বরূপজান বেওয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আগুনের মধ্যে দিয়ে পালানোর সময় গলির মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এ দিন চাঁচলে সাপ্তাহিক হাট থাকায় গ্রামে পুরুষ ছিলেন না বললেই চলে। গরমে মাঠে না রেখে বাড়ির গোয়ালঘর বা ছায়ায় গবাদি পশু বেঁধে রেখেছিলেন তাঁরা। পুড়ে মারা যায় সেগুলিও। মৃত শিশুর বাবা মহম্মদ দুলাল এ দিন বলেন, “হাটে যাওয়ার সময় ছেলে কিসমিস আনতে বলে। তার আগেই ও যে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কে জানত? ছেলে, বাড়ি, জিনিসপত্র কিছুই বাঁচাতে পারলাম না।”
আগুন লাগার ঘণ্টা দেড়েক পরে দমকল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনতে বিকাল গড়িয়ে যায়। দমকল সময়ে পৌঁছালে এভাবে সব হারাতে হত না বলে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গতেরা। দেরি হওয়ার কথা স্বীকার করে চাঁচল দমকল কেন্দ্রের ওসি শান্তনু সিংহ বলেন, “পঞ্চায়েতের ডারাকান্দি এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে কর্মীরা সেখানেই প্রথমে যান। সেখানে ৫টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। তাই এখানে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে।”
বুধবার ছবি দু’টি তুলেছেন বাপি মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy