শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, শাশুড়ি ও স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন এক গৃহবধূ। জলপাইগুড়ি শহরের আদরপাড়ার ওই বধূ তাঁর মা ও বাবার সঙ্গে হলদিবাড়িতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও বধূর শ্বশুরবাড়ি এবং পড়শিদের অভিযোগ, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বধূ তাঁর শ্বশুরবাড়ির পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।” তবে ওই বধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বধূর ডাক্তারি পরীক্ষার দাবি তুলেছেন। কিন্তু পুলিশ জানায়, ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে বলে ডাক্তারি পরীক্ষা অপ্রয়োজনীয়। বধূর মামা বলেন, “আমরা কোথাও বলিনি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শ্বশুর তাঁর সঙ্গে সহবাস করার চেষ্টা করতেন।” বধূর শাশুড়ি আসিতা বেগম, স্বামী বিট্টু শেখ এবং শ্বশুর পেশায় মাংস বিক্রেতা শেখ সালালউদ্দিন বধূর সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। শ্বশুর বলেন, “ওকে আমি মেয়ের মতো দেখি। ও আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ে। এমন অভিযোগ করবে ভাবতে পারিনি। পাড়া-পড়শিরা আমাকে চেনেন। সকলে ওঁদের জিজ্ঞাসা করে দেখুক।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুরের বাসিন্দা ওই তরুণীর সঙ্গে জলপাইগুড়ির আদরপাড়া এলাকার শেখ বিট্টুর বিয়ে হয় ২০১২ সালের ১৬ মে। বধূটি জানিয়েছেন, বিয়ের পরে তিন চার মাস বেশ ভাল ছিলেন। তাঁর পরে স্বামী বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পরিবারের শান্তির কথা ভেবে ২৫ হাজার টাকা এনে দেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ফের টাকা চাইলে তিনি আপত্তি জানালে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। এক সময় তাঁকে টাকার বিনিময়ে পর পুরুষের সঙ্গে সহবাস করার জন্য শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী চাপ দিতে থাকেন বলে তাঁর অভিযোগ। বধূ গত ২৩ অগস্ট জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, ‘স্বামী ও শাশুড়ির অবর্তমানে শ্বশুর আমার সঙ্গে সহবাস করার চেষ্টা চালান। ঘটনার কথা স্বামীকে জানালে সে মারধর করেন।”
যদিও সোমবার বধূ তাঁর মা-বাবার সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “শ্বশুর-শাশুড়ি খারাপ। স্বামী ভাল। আমি ওঁর সঙ্গে সংসার করতে চাই।” মা বলেন, “এত ঘটনার পরেও মেয়ে ঘোরের মধ্যে আছে। ওঁকে বোঝানো হচ্ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “মেয়ে এতদিন লজ্জায় কিছু জানাতে পারেনি। গত ১০ মে ওঁকে বারুইপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কয়েকদিন আগে ঘটনার কথা জানায়। এর পরে জলপাইগুড়িতে এনে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করানো হয়।”
এদিকে বধূর শাশুড়ি আসিতা বেগম দাবি করেন, “আমি অসুস্থ তাই কম বয়সে ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। নিজের মেয়ের মতো বৌমাকে ভালোবাসতাম। এখন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে।” বধূর শ্বশুর বলেন, “মুরগির মাংস বেঁচে সংসার চালাই। কিন্তু কোন দিন অসৎ পথে যাইনি। পুলিশ আসুক। তদন্ত করে দেখুক।” ঘটনার কথা শুনে প্রতিবেশী দীপায়ণ কর, শ্যামলী সরকার, লক্ষ্মী দের মতো কয়েকজন পড়শির সন্দেহ, “পুরোটাই ষড়যন্ত্র।” আদরপাড়া ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর বীরেন রায়ও বলেন, “ছেলের বাড়ি থেকে বিষয়টি জানিয়েছে। মেয়ের বাড়ি থেকে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা মানতে পারছি না। মোটেও সত্যি নয়। ওঁদের সম্পর্কে কোনওদিন খারাপ কথা শুনিনি। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে।”
তবে বধূর মা নাজমা বেগম এবং মামা পারভেজ হোসেন বলেন, “মেয়ের মনে এখনও টান আছে, তাই সংসার করার কথা বলছে। কিন্তু আমরা তো অভিভাবক, সবদিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের মেয়েকে তো বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy